ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরোনা ফ্ল্যাটে প্রবাসীদের বিনিয়োগ

পুরোনা ফ্ল্যাটে প্রবাসীদের বিনিয়োগ

করোনা মহামারির ধাক্কায় অনেকের আয় কমে যাওয়ায় নিজের পুরোনা ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে সেসব ফ্ল্যাটে বেশি দাম পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এমনিতেই করোনার কারণে সাধারণ মানুষ নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। তাদের হাতে নগদ অর্থ কমে এসেছে। বহু লোক জীবন ধারণের খরচ জোগাতে অ্যাপার্টমেন্ট কিছুটা কম দামেই বিক্রি করছেন। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেসব কিনে নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারাদেশেই পুরোনা ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক বেড়েছে।

করোনাকালে বিদায়ী বছরে ৮ হাজার কোটি টাকার পুরোনো ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রি হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে যা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। রাজধানীর বাইরে দেশের বড় শহরগুলোতে পুরনো অ্যাপার্টমেন্টের বিক্রি বাড়ার চিত্র এরকমই। গত ২০২০ সালে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার পুরনো অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিনামা নিবন্ধন হয়েছে বিভিন্ন সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। তার আগের বছর ২০১৯ সালে বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার পুরনো ফ্ল্যাট। করোনার মধ্যে পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে।

রাজধানীর এক ফ্ল্যাট মালিক ৮০ লাখ টাকায় ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ২০১৮ সালে। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালের শেষ দিকে চাকরি হারালে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেন। তবে মাসে মাসে সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে গেল বছরে নিজের কেনা ফ্ল্যাট কম দামে বিক্রি করে দেন। তার সেই ফ্ল্যাটটি কিনে নেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক ব্যক্তি। ভবিষ্যতে ফ্ল্যাটটি বেচলে বেশি দাম পাওয়া যাবে এমন ভাবনা থেকেই প্রবাসী ক্রেতা ফ্ল্যাটটি কিনে নেন।

পুরনো ফ্ল্যাট বিক্রির পরিমাণ বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, রেডি ফ্ল্যাটের সংখ্যা আগের চেয়ে কমে যাওয়া ও নির্মাণ সামগ্রীর বাজারদর অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় নতুন ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে পুরনো ফ্ল্যাটের দাম সেই হারে বাড়েনি। এ কারণে লোকে নতুন ফ্ল্যাট না কিনে পুরনো ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকছে বেশি। তবে পুরোনো ফ্ল্যাট কেনার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা জমানো টাকা এই খাতে বিনিয়োগ করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের বড় অংশই দেশের বাইরে বিভিন্ন কাজ করে। তাদের লক্ষ্য থাকে ভালোভাবে সংসার পরিচালনা আর একটি ভালো আবাসন ব্যবস্থা করা। দেখা যায়, প্রবাসীরা নগদ টাকা সাধারণত বিনিয়োগ করেন সহজলভ্য জায়গায়। সেক্ষেত্রে পুরাতন ফ্ল্যাট বা প্লট কিনেতে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী আছেন, তারাও এই খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

মূলত করোনার কারণেই নিজের ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। ফ্ল্যাট বিক্রির কারণগুলোর মধ্যে হলো- পরিবারের খরচ মেটানো, চাকরি চলে যাওয়া, ঋণের টাকা পরিশোধ করা। নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক আনন্দবাজারকে বলেন, করোনাকালে দেশের বিভিন্ন শহরে কমার্শিয়াল স্পেস, আবসিক প্লট, পুরনো ফ্ল্যাট কেনাবেচার দলিল ও চুক্তিনামা নিবন্ধনের হার এর আগের দু-বছরের তুলনায় বেশ বেড়েছে। সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন থেকে গত বছর সরকার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। পুরাতন ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিনামা নিবন্ধন থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন