- বাড়বে রাজস্ব আয়, বাচবে সময়
- দূর হবে রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা
- ঘরে বসেই শুল্ক পরিশোধ সুবিধা
- সার্ভারের ক্রুটির ভয় সেবাগ্রহীতাদের
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ঘুষ লেনদেনসহ সব ধরনের অনিয়ম রুখে দিতে ১ জানুয়ারি থেকে শতভাগ ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিদ্ধান্তনুযায়ী আমদানি রফতানি সংশ্লিষ্ট সব ধরনের শুল্ক কর অনলাইন মাধ্যমে (ই-পেমেন্ট) পরিশোধ বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমদানিকারকদের সব ধরনের ভোগান্তি দূর হবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এর আগে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে দেশের সবগুলো শুল্ক স্টেশন এবং কাস্টমস হাউসে ২ লাখ টাকার বেশি শুল্ক কর হলে তা ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে পরিশোধ করার বিধান কার্যকর করা হয়। ব্যাপক সাড়া পেয়ে নতুন বছরের শুরু থেকে শতভাগ ই-পেমেন্ট পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়কারী গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থা। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, শতভাগ অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে একদিকে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে। অন্যদিকে সময় বাঁচবে ও রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা দূর হবে।
তবে কাস্টমসের সেবাগ্রহীতারা বলছেন, অতীতে সার্ভারের ক্রুটির কারণে ই-পেমেন্ট শুল্ক পরিশোধে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী সকালে ই-পেমেন্ট করেও শুল্ক পরিশোধের কনফারমেশন বার্তা পাননি। এখন সব ধরণের শুল্ক পরিশোধ ই-পেমেন্টে হওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়াতে সার্ভারের ওপর চাপ বাড়াটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ই-পেমেন্টের ক্ষেত্রে এনবিআরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত থাকে। কোনো একটি সার্ভারে ক্রুটি দেখা দিলে সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি টেকনিক্যাল। তাই আগে থেকে সার্ভারের ক্রুটি হবে বলা মুশকিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ই-পেমেন্ট করতে বিল অব এন্ট্রি নম্বর, অর্থবছর, কাস্টম হাউজের অফিস কোড, পরিশোধকৃত শুল্কের পরিমাণ, এআইএন নম্বর এবং ফোন নম্বর- এ ছয় ধরনের তথ্যের প্রয়োজন হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ করা হলে আমদানিকারকের ফোন নম্বরে শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত কনফার্মেশন এসএমএস পৌঁছে যাবে। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসাইকুডা সফটওয়্যার নেটওয়ার্কে শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য আপডেট হবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্দেশনা মোতাবেক বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসাবে এনবিআর গত ২০১৭ সাল থেকে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে। এ পদ্ধতিতে আমদানিকারক বা তার মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারিতে শুল্ক-করের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। আগে পদ্ধতিটি বাধ্যতামূলক না করার ফলে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। তবে এখন ই-পেমেন্টে শুল্ক পরিশোধ বাধ্যতামূলক করার ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান বলেন, ই-পেমেন্টের ক্ষেত্রে আমদানি-রফতানিকারকদের ইউজার আইডি দিয়ে আরটিজিএস (রিয়েলটাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) গেটওয়ের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ হয়। এর আগে ই-পেমেন্টে শুল্ক কর দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছে। আমরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা ব্যাংকের সার্ভারের সমস্যার কথা বলতেন। আবার এনবিআরের কেন্দ্রীয় সার্ভারেও সমস্যা হতো মাঝেমাঝে। ই-পেমেন্ট মানে হচ্ছে, এখন পেমেন্ট করলাম এখন পরিশোধ হয়ে যাবে।
গোলাম রাব্বানি রিগ্যান আরো বলেন, আমাদের ক্ষেত্রে এমনও মাঝে মাঝে হয় শুল্ক পরিশোধ করার ২৪ ঘণ্টার পরে শুল্ক পরিশোধ হয়েছে এই কনফারমেশনটি আসছে। আমাদের প্রশ্ন হলো-সার্ভারের ক্রুটির কারণে এক শতাংশ ব্যবসায়ীও কেন ভোগান্তিতে পড়বেন। তিনি বলেন, শুল্ক পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা নিসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের আশঙ্কা হলো, ১ জানুয়ারি থেকে সকল শুল্ক পরিশোধ ই-পেমেন্টে করার বাধ্যবাধকতা করে দিয়েছে এনবিআর। তাই সার্ভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি শুল্কায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারপরেও আমরা আশা করি, সবকিছু ভালোই ভালোই হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সিস্টেম এনালিস্ট আহসান হাবীব সুমন বলেন, ই-পেমেন্টে কিছু কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। হয়তো একসঙ্গে অনেকে পেমেন্ট করছেন তখন সার্ভারে জট লাগতে পারে। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রস্তুতি ভালো আছে। কাজ পুরোপুরি শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারবো, কোথাও সমস্যা হচ্ছে কিনা। সে অনুযায়ি আমরা ব্যবস্থা নেব।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, নতুন এ সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে আমদানিকারকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইউজার আইডি দিয়ে আরটিজিএস গেটওয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই শুল্ক পরিশোধ করতে পারবেন। এর আগে ব্যাংকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে শুল্ককর পরিশোধ করতে হতো। এখন আর এ ধরণের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
আনন্দবাজার/শহক