ঢাকা | শনিবার
২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপেক্ষায় উদ্যোক্তারা নেই অগ্রগতি

নওগাঁ
  • ২৫০ একর অধিগ্রহণে ব্যয় ৭২ কোটি টাকা
  • ১৫ মাসেও আসেনি বেজার বরাদ্ধ

বেজা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব এলে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করা হবে

– হারুন অর রশিদ, ডিসি, নওগাঁ

কৃষিভিত্তিক জেলা নওগাঁয় ধান ও আমকে ব্র্যান্ডিং করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠা একান্ত প্রয়োজন

– ইকবাল শাহারিয়ার রাসেল, সভাপতি, নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

নওগাঁয় অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদনের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পটির কাজ পিছিয়ে পড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখা হাজারো বেকার যুবক ও উদ্যোক্তার মাঝে হতাশা বিরাজ করেছে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন জেলাবাসী।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০-এর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ ঘোষণার পর নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম শাহ চৌধুরীসহ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফাহাদ পারভেজ সম্মিলিতভাবে সাপাহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে সুপারিশ পাঠান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে নওগাঁর সাপাহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন ঘোষণা দেন।

অনুমোদন ঘোষণার পর ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার-খঞ্জনপুর বিজিবি ক্যাম্পের অদুরে ভারতের নিকটবর্তী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার দক্ষিণে সাপাহার উপজেলা সদরের অদূরে খেড়ুন্দা মৌজায় সাপাহার-খঞ্জনপুর বিওপি ক্যাম্প রাস্তার উত্তর পার্শ্বে জাতীয় সড়ক, নদী, আকাশ পথ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ যাবতীয় অবকাঠামোগত সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে ২৫৫.১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ওই মৌজার ২৫০ দশমিক ৬৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠায় বেজা।

এরপর ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ব্যয় জানতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বেজা। এর সাড়ে চার মাস পর (২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ভূমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য ব্যয় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় বেজাকে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব পাঠানোর ১৫ মাস অতিক্রম হলেও বেজা থেকে বরাদ্দ না আসায় কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রসঙ্গে নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহারিয়ার রাসেল বলেন, নওগাঁ জেলা কৃষিভিত্তিক হওয়ায় ধান ও আমকে ব্র্যান্ডিং করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠা একান্ত প্রয়োজন। ধান থেকে চাল, খুদ, কুঁড়া, তুষ, ব্র্যান্ড ও ব্র্যান্ড অয়েল তৈরি হয়, যা দেশের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এসবের জন্য আলাদা শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে নওগাঁ জেলা অর্থনৈতিকভাবে বেশ উন্নত হবে।

এছাড়াও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে উঠলে হিলি, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর অপেক্ষা সহজলভ্যভাবে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে হিলি, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ওপর চাপ কমে আসবে। এতে সময়মত পণ্য রফতানি ও আমদানি করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণে আনুষঙ্গিক খরচসহ সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি চিঠি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় জেলা প্রশাসকের সার্বিক প্রচেষ্টায় প্রায় শতভাগ প্রস্তুত। শুধু বেজা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবসহ বরাদ্দ এলেই জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ বলেন, সাপাহার অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে বেজা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব এলে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করা হবে। আমরা অধিগ্রহণ বিষয়ে যথেষ্ট এগিয়েছি। এখন বরাদ্দ পেলেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় নওগাঁর বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলা ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। যেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এর আশেপাশের পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর উপজেলাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। যেখানে সাপাহারসহ আশপাশের উপজেলা গুলোর হাজারো বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন