রাজশাহীর বিউটি পার্লারগুলোতে মাসে আয় ৩০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত
বাংলাদেশে পার্লারের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ঢাকায় ১৯৬৩ সালে। এ দেশে আসা চীনা নাগরিক কার্মেল চ্যাং লিউ শেই প্রথমে বিউটি পার্লার চালু করেন। প্রথমে এর কোনো নাম ছিল না। তবে, ১৯৬৫ সালে এটি ‘মে ফেয়ার’ নামে আবার চালু হয়। তার পরপরই হংকং বিউটি পার্লারও ছিল ঢাকায়। আরও পরে লি বিউটি পার্লার চালু হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
স্বাধীনতার পর প্রথম বাঙালি হিসেবে জেরিনা আজগর খোলেন লিভিং ডল বিউটি পারলার। সেটা সত্তরের দশকের কথা। পুরানা পল্টনের গাজী ভবনে একটি ঘরে দুটি চেয়ার নিয়ে শুরু করেন পারলার যাত্রা। সেই সময়ে অভিনেত্রী এবং অভিজাত পরিবারের নারীরাই রূপচর্চা সাজসজ্জার সেবা গ্রহণ করতেন। অভিজাত শ্রেণির মানুষ ছাড়া এমন সেবা নেয়ার চিন্তা করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল।
তবে সময় গড়ায় আপন নিয়মে। বিশ্বায়নের সাথে সাথে দেশের নারীরা এখন সৌন্দর্য চর্চায় অনেক সচেতন এবং সৌখিন হয়ে উঠেছেন। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশের শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে সৌন্দর্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিউটি পার্লার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
দেশের অন্যান্য জেলা শহরগুলোর মতোই রাজশাহী মহানগরীতেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহু বিউটি পার্লার। এসব সৌন্দর্যবর্ধনকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে বহু নারীরা। রাজশাহী পার্লার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুখসানা হুদা জানান, রাজশাহী মহানগরীতে প্রতিষ্ঠিত বিউটি পার্লারের সংখ্যা এখন শতাধিক। এসবের বাইরেও অনেকেই বাড়িতে ছোট পরিসরে এ কাজ করে থাকেন। আবার কেউ ট্রেনিং নিয়েছেন। তাদের কেউ আবার পার্লার খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মহানগরীর আশেপাশের উপজেলা মোহনপুর, কেশরহাট, বাগমারা, ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর. পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী, তানোর, পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো শতাধিক বিউটি পার্লার রয়েছে।
রাজশাহী মহাগরীতে অবস্থিত বিউটি পার্লারগুলোর কয়েকজন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীতে এ শিল্পের পেছনে কয়েক হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বাড়তেই আছে। আগে শহরের মধ্যে বিউটি পার্লারের গণ্ডি থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম পর্যায়েও। ইউনিয়ন পর্যায়ের ছোট বাজারগুলোতেও গড়ে উঠেছে অনেক পার্লার। নারীরা রূপচর্চার সচেতন হওয়াতে পার্লারের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়েছিল বিউটি পার্লারের মালিক-কর্মচারীরা। এর ফলে অন্যান্য খাতের মতো মুখ থুবড়ে পড়েছিল খাতটি। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়ত হওয়ায় ভোগান্তি আরো বাড়ে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। অনেক মালিক প্রতিষ্ঠানের ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ নিজেদের সংসার চালানো নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বিউটি পার্লার শিল্পতেও অচলাবস্থা কাটতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে শিল্পটি।
রাজশাহীতে অবিস্থিত এসব বিউটি পার্লারগুলোর আয় ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকার উপরে পর্যন্ত হয়। মহানগরীর ঘোষপাড়া এলাকার বহুল পরিচিত গ্লো টার্চ বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা। করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে বিউটি পার্লারটি দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে আয় করেছে। তবে, করোনার সময় বেশ ক্ষতির মুখে পড়ে বিউটি পার্লারটি। করোনা পরবর্তী সময়ে আবার নতুনভাবে শুরু করেছে।
গ্লো টার্চ বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা’র মালিক দিলশাদ রাবিয়া অহনা জানান, করোনার আগে তার অধিনে ৯ জন বিউটিশিয়ান কাজ করতেন। করোনার মধ্যে বন্ধ থাকার কারণে অনেককিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন ৪ জন বিউটিশিয়ান নিয়ে আবার কাজ করেছেন তিনি।
রাজশাহী মহানগরীর দড়ি খরবোনা এলাকার বিউটি পার্লার কেয়া স্পা। তার মালিক কেয়া ইসলাম জানান, করোনার আগে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হতো। ওইসময় তার সঙ্গে আরো ৪ জন বিউটিশিয়ান কাজ করতেন। কিন্তু করোনার সময় থেকে বিউটি পার্লারটি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সময়ে একজন বিউটিশিয়ান নিয়ে আবার নতুন করে শুরু করেছেন তিনি।
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার সিনোরিতা বিউপি পার্লারের মালিক সোমা বলেন, বর্তমানে বিউটি পার্লারের আয় স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তার বিউটি পার্লারে ১০ জন নারী কাজ করে।
রেইনি পার্ক বিউটি সেন্টারের মালিক রুমিলা আক্তার বলেন, করোনার সময় ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে। লকডাউনের কারণে নারীরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। ততেই ভাটা পড়ে ব্যবসায়। তবে এখন বেশ ভালো। আগামীতে আরো বেশি কর্মি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার।
রাজশাহী পার্লার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুখসানা হুদা বলেন, বিউটি পার্লার করে অনেক নারী স্বাবলম্বি হয়েছেন। নারী উদ্যোক্ত হিসেবে আরো এ শিল্পে আসার জন্য অনেক নারী আগ্রহ দেখাচ্ছেন। রাজশাহী অঞ্চলে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিউটি পার্লার শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আনন্দবাজার/শহক