বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মচঞ্চল শিল্পনগরী এখন নীরব

শিল্পনগরী খুলনা এখন নীরব

খুলনার শিল্পাঞ্চল

এক সময়ের ব্যাপক কর্মচঞ্চল্য শিল্পনগরী খুলনা এখন নীরব হয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো বন্ধ হওয়ায় বিভাগীয় এ অঞ্চলের ‘শিল্পাঞ্চল’ এখন নীরব। নিউজপ্রিন্ট মিল ও হার্ডবোর্ড মিল বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগে। যে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে মাস কয়েক আগে। পাটকলগুলো চালু হবে, এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন শ্রমিকরা। তবে আগের সেই কর্মচাঞ্চল্য আর নেই খুলনায়।

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে খালিশপুরে চারটি ও ভৈরব নদের ওপর পাড়ে দিঘলিয়ায় একটি, ফুলতলার আটরা শিল্প এলাকায় দুটি ও যশোরে দুটি পাটকল রয়েছে। তবে এখন সব জায়গাতেই ফাঁকা। মিলের খট খট শব্দ আর শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর এলাকা এখন একবারেই নীরব।

স্থানীয়রা বলছেন, আবাসিক শ্রমিকদের জন্য গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের টাকা নেওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল ঘর-বাড়ি ভেঙে কর্তৃপক্ষকে জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে হবে। টাকা পাওয়ার আশায় তাই সবাই নিজেদের ঘরগুলো ভেঙে ট্রাকে করে চলে গেছেন। কয়েকজন শ্রমিক জানালেন, মিল বন্ধ, শ্রমিক নেই। মিল বন্ধ হওয়ায় বদলি শ্রমিকরা গেছেন। তবে বদলি শ্রমিকরা টাকা পাননি। অনেকেই কিছু টাকা পেয়েছেন। তবে তার অর্ধেক খরচ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন।

স্বাধীনতার পর খুলনার প্রায় সব শিল্প কলকারখানা জাতীয়করণ করা হয়। তবে আশির দশক থেকে লোকসানের অভিযোগে একের পর এক মিল-কলকারখানা বন্ধ হতে থাকে। খুলনার শিল্পাঞ্চলের মুখরিত পরিবেশ পাল্টে যায়। বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ কলকারখানা চালুর চেষ্টা করা হয়। তবে খুলনায় শিল্প স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগ তেমন জোরদার না থাকায় কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও সৃষ্টি হয়নি। অনেকেই বলেন, খুলনার দুরবস্থার প্রধান কারণ পাটশিল্পের মন্দাদশা। এই মন্দাদশা খুলনার পাটকলগুলোকে লোকসানি শিল্পে পরিণত করে। পদ্মা নদীর কারণে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় শিল্প স্থাপনের যৌক্তিকতা হ্রাস পায়। গ্যাস সংযোগ না থাকায় শিল্পস্থাপন ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুনঃ  শীতেও ইলিশের ব্যাপক আমদানি

তবে খুলনার সুদিন ফেরার স্বপ্ন দেখাচ্ছে পদ্মা সেতু। খুলনায় জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা হলে আবার সুদিন ফিরবে। এমনটাই মনে করছেন উদ্যোক্তারা। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রথিতযশা বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম বাংলাদেশ সফরকালে খুলনা মহানগরীর উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বন্দরনগরী খুলনার উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এক সময়ে সেই কর্মচাঞ্চল্য আবারো ফিরবে বলেই মনে করছেন এখানকার মানুষ।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন