আয়তনে ছোট এবং ঘনবসতিপূর্ণ হলেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে ১৫টি ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান তৈরি করেছে। এসব খাতে বাংলাদেশ আছে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকিগুলো কষ্ট করে অর্জন করতে হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ১৫টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান জানা গেছে।
ধান উৎপাদনে তৃতীয়
স্বাধীনতার পর যখন মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, তখন দেশে খাদ্যসংকট ছিল। আমদানি করে চলতে হতো। ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৭ কোটিতে পৌঁছেছে। এ সময়ে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে অনেক। তারপরও সেই বাংলাদেশ আজ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
ইলিশে প্রথম
সারা বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে হচ্ছে, যা পরিমাণে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। চার বছর আগেও বিশ্বে মোট ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬৫ শতাংশ। ইলিশ উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয়, মিয়ানমার তৃতীয়। এ ছাড়া ইরান, ইরাক, কুয়েত, পাকিস্তানেও সামান্য ইলিশ উৎপাদন হয়।
তৈরি পোশাকে তৃতীয়
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ। করোনার মধ্যে ভিয়েতনামের রপ্তানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাইয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে বাংলাদেশ।
প্রবাসী আয়ে সপ্তম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোয়া কোটির মতো বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ তারা দেশে পাঠান মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র-পরিজনদের কাছে। প্রবাসী আয় আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ভারত আছে প্রথম স্থানে। এ ক্ষেত্রে চীন আছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
পাট রপ্তানিতে প্রথম, উৎপাদনে দ্বিতীয়
‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। উৎপাদনের পরিমাণ ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টন, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪২ শতাংশ। প্রায় ২০ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম ভারত। দেশটিতে হয় বিশ্বের উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ। ৪৫ হাজার টন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে চীন।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। পাট দিয়ে ২৮৫ ধরনের পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
সবজিতে তৃতীয়
সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বছরে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান চীনের; দ্বিতীয় স্থান ভারতের। বেসরকারি কোম্পানিগুলো সারা বছর চাষের উপযোগী হাইব্রিড বা উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ উদ্ভাবন এবং তা বাজারজাত করার ফলে সবজি চাষে সাফল্য ও বৈচিত্র্য এসেছে। দেশে বর্তমানে ৬০ ধরনের সবজি উৎপাদন হচ্ছে, যার সঙ্গে যুক্ত ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার।
মিঠাপানির মাছে তৃতীয়
মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। নদ-নদীর খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয় বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ। ১৬ শতাংশ নিয়ে প্রথম চীন, ১৪ শতাংশ নিয়ে ভারত দ্বিতীয়।
আলুতে ষষ্ঠ
আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ষষ্ঠ। স্বাধীনতার এক বছর আগে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ টন। ৫০ বছরে আলু উৎপাদন ১১ গুণ বেড়েছে।
আউটসোর্সিংয়ে দ্বিতীয়
শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা ফ্রিল্যান্স বা আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এখন। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের চুক্তি করে সেই কাজ শেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়াই হলো ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখ, যা শতকরা হারে বিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ। এর বদৌলতে বাংলাদেশ এ খাতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যায় প্রথম হলো ভারত।
কাঁঠালে দ্বিতীয়
বিশ্বে বছরে ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এ ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ১০ লাখ টন। বিশ্বে সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টন কাঁঠাল হয় ভারতে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।
আমে অষ্টম
বাংলাদেশ এখন বিশ্বে আম উৎপাদনে অষ্টম। বছরে উৎপাদন হয় ২৫ লাখ টনের মতো। ১০ বছর আগে ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন নিয়ে অবস্থান ছিল দশম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানেও উঠেছিল। আম উৎপাদনে সবার ওপরে ভারত। তাদের উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কোটি টন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন।
পেয়ারায় অষ্টম
১০ লাখ ৪৭ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন করে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে। ১ কোটি ৭৬ লাখ টন নিয়ে ভারত প্রথম এবং ৪৪ লাখ টন উৎপাদন করে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ছাগলের দুধে দ্বিতীয়, মাংসে চতুর্থ
২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশেই গবাদিপশুর লালনপালন বাড়তে থাকে। গরু ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।
ওষুধ রপ্তানিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম
বাংলাদেশ ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৮ শতাংশ দেশেই তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রকাশিত বিজ্ঞান প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ।
চা উৎপাদনে দশম
বাংলাদেশ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম।
আনন্দবাজার/এম.আর