পুঁজিবাজারে নিয়ে কয়েকটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈরিতা তৈরি হয়েছে। আর সে কারণে বর্তমানে দেশের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একে অপরের বিপক্ষ অবস্থানে রয়েছে। দুই সংস্থার এমন বিরোধ বা টানাপোড়েন নিরসনে প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ। তাহলেই সব বৈরিতার অবসান হবে। এমনটাই মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে সুবাতাস ফিরবে বলে প্রতীক্ষায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ ধরনের দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে চূড়ান্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসতে পারেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি কেউ নিশ্চিত কোনো তথ্য না দিলেও সবাই আশা করছেন আগাম সপ্তায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই সংস্থার প্রধানদের বৈঠক হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই বিরোধ দীর্ঘায়িত হতে দেয়া ঠিক হবে না। শিগগিরই সমাধান করতে হবে। তাদের কথা, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন স্বার্থে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এক হতে হবে, এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। সেটা না হলে পুঁজিবাজারের সামনের দিন ভালো যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিনিয়োগকারী।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত উল-ইসলাম দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, এখানে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতামূলক আচরণ জরুরি। শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের বিযয়ে প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করা দরকার। এ বিষয়ে সমাধানের জন্য প্রয়োজনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবেন বলে জানান।
গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক-বিএসইসি ছাড়াও এনবিআর, আইসিবিসহ অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা ছিলেন। ওই আলোচনায় যেসব বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের (বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি) মতভেদ রয়েছে, আলোচনায় সেগুলো নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আবারো বৈঠকে বসবেন তারা। তবে আলোচনা চলছে, সেই বৈঠকে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে পারেন। অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও এমন আভাস মিলছে।
সূত্রমতে, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল- ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে সচিব আবদুর রউফ তলিুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহও উপস্থিত থাকবেন।
অর্থমন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বেশকিছু বিষয় নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে। কিছু আইনি জটিলতার কারণে সমাধান দিতে খোদ অর্থমন্ত্রণালয়ও ধীরগতিতে এগুচ্ছে। তবে কিছু বিষয় দুই পক্ষ মেনে নিলেই সমাধান সহজ হতো বলে মনে করছেন অনেকে। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না বাংলাদেশ ব্যাংক-বিএসইসির কেউই।
গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই পক্ষের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে করা বৈঠকে যেসব আলোচনা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরো একটি বৈঠক করতে হবে। ওই বৈঠক চলতি মাসে বা পরের মাসের শুরুতে হবে।
২০১৯ সালে মন্ত্রণালয়ে ওই বৈঠকে, তখন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে ছিল পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিশেষ তহবিল গঠন, বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা দেয়া এবং পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখা। এর বাইরে পুঁজিাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান থাকলেও কোনো বছরে মুনাফা করলে লভ্যাংশ দেয়ার পক্ষে প্রস্তাব দেয়া হয়।
আনন্দবাজার/শহক