ঢাকা | মঙ্গলবার
১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশযাত্রার খরচ বাড়াবে বীমা ফি

বিদেশযাত্রার খরচ বাড়াবে বীমা ফি
  • সৌদি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ জীবন বীমার
  • সৌদির প্রিমিয়াম প্রস্তাব বেশি বলে অভিযোগ

প্রবাসে মারা যাওয়া ৫৪ কর্মীর পরিবারকে এক কোটি ২২ লাখ টাকা পরিশোধ

প্রবাসে মারা যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারের আর্থিক দুর্দশা লাঘব ও দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হওয়া শ্রমিকদের সুচিকিৎসার অর্থ যোগান নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চালু হয় ‘প্রবাসী কর্মী বীমা’। এই বীমা পলিসির অধীনে, এককালীন ৪৯০ টাকা প্রিমিয়ামের বিপরীতে প্রবাসী কর্মীদের ৪ লাখ টাকা বীমা কাভারেজ পাওয়ার কথা। তবে নতুন করে সৌদি এরাবিয়ান কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স কোম্পানির (সাইকো) সাথে চুক্তির উদ্যোগ নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন।

কোম্পানিটির প্রস্তাবিত নতুন স্কিমে প্রবাসীদের এককালীন সাড়ে ৪ হাজার টাকা প্রিমিয়ামের বিপরীতে ১০ লাখ টাকা বীমা দাবির সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি ২০টি প্রধান রোগের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা, দুর্ঘটনাজনিত কারণে অঙ্গহানি/অক্ষমতা এবং মৃতদেহ দেশে আনার ব্যয়বহনের সুবিধা থাকবে। বীমার শর্তে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে বীমার মেয়াদকালে বা মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা পাবেন প্রবাসী কর্মীরা।

জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জহুরুল হক বলেন, সাইকো যে প্রিমিয়াম প্রস্তাব করেছে, তা অনেক বেশি। আমরা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের প্রতিনিধি দল চলতি ডিসেম্বরেই ঢাকা আসবেন। তারা আসলে, সে বিষয়ে আলোচনার পরই চূড়ান্ত হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, বীমা কখনো বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়। বিশ্বব্যাপী সব ধরনের বীমাই ঐচ্ছিক। তাই প্রবাসী বীমাও ঐচ্ছিক হওয়া উচিত। এজন্য সৌদি কোম্পানিগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন বীমা চালুর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে নিবিড় সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “প্রবাসী কর্মী বীমা চালুর পর থেকেই করোনা মহামারি শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও মৃত প্রবাসী কর্মীদের নমিনিরা সবাই বীমা সুবিধা পাচ্ছেন। আর বিদেশে যারা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অঙ্গ হারাচ্ছেন, তারা কেন বীমা সুবিধা দাবি করতে পারছেন না- তার কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। প্রবাসীরা যাতে বীমা সুবিধা পান, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

এর আগে দুই বছর মেয়াদি ‘প্রবাসী কর্মী বীমা’র আওতাভুক্ত মৃত শ্রমিকের নমিনিরাই বীমা দাবির অর্থ পান। চলতি মাসের শেষদিকে এ বীমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এর আওতায় আহত ও অঙ্গহানীর শিকার হওয়া শ্রমিকরা কোনোপ্রকার ক্ষতিপূরণ পাননি। জীবন বীমা করপোরেশনের তথ্যানুসারে, গত অক্টোবর পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭ পলিসিতে প্রিমিয়াম বাবদ প্রবাসীরা জমা দিয়েছেন ৪০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী ৫৪ কর্মীর পরিবারকে বীমা দাবি হিসেবে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে জীবন বীমা করপোরেশন।

জীবন বীমা করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশে আহতদের বিষয়ে তথ্যের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। আহত কোনো প্রবাসী ক্ষতিপূরণের জন্য এখনো আবেদন করেনি। যারা মারা যাচ্ছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততার সাথে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসী কর্মীদের কেউ দুর্ঘটনায় আহত হলেও, তার আবেদন করার উপযুক্ত কোনো স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। যেসব দেশে প্রবাসীরা যাচ্ছেন, সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে জীবন বীমা করপোরেশনের কোন হেল্প ডেস্ক নেই। ফলে প্রবাসীরা কোথায় আবেদন করবেন, তা সুনির্দিষ্ট নয়।

একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা জীবন বীমা করপোরেশন অফিসে কেউ আবেদন করলেও; আবেদনকারী সত্যিকার অর্থেই কমলে দুর্ঘটনায় আহত কিংবা অঙ্গহানী হয়েছেন কিনা, তা বাংলাদেশ থেকে যাচাই-বাছাই করার কোন উপায় নেই। ফলে আহতরা এ বীমা থেকে সুবিধা পাচ্ছেন না’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবন বীমা করপোরেশনের এমডি জহুরুল হক বলেন, “প্রবাসীদের কল্যাণে চালু করা বীমাটির বয়স দুই বছর হতে চলেছে। বীমাটির বিষয়ে এখনো মূল্যায়নের সময় আসেনি। তবে করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের যথাযথ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, যেকোন উদ্ভাবনী প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য, সমস্ত ধরনের নিয়ম-কানুন আগে থেকেই চূড়ান্ত করতে হবে এবং প্রকল্প থেকে উদ্দিষ্ট সুবিধাভোগীরা কীভাবে উপকৃত হবেন- তা সুনির্দিষ্ট হতে হবে। এই বীমা প্রকল্পের আওতায় প্রবাসীদের সুবিধাগুলি সহজতর করার জন্য একটি ব্যাপক প্রচার উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। দুর্ঘটনায় আহত বা শারীরিক অক্ষমতার শিকার প্রবাসীরা বীমার সুফল না পেলে; সরকার তাদের স্বার্থ রক্ষায় যে প্রিমিয়াম দিচ্ছে এবং তাদের থেকে যে প্রিমিয়াম নেওয়া হয়েছে- তা কোনো কাজেই আসবে না।

প্রতিবছর সৌদি আরব থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পায় বাংলাদেশ, গত অর্থবছরে দেশটি থেকে প্রবাসী কর্মীরা ৬৩৩ কোটি ডলার সমপরিমাণ আয় দেশে পাঠান। যা ছিলো মোট রেমিট্যান্সের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান এবং বাহরাইন বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের শীর্ষ ১০টি উৎসের মধ্যে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ৫০ লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন, যা বিদেশে কর্মরত জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন