গত সপ্তাহে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেও চলতি সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসিই সূচকের পতন ঘটেই চলছে। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে কমে গেছে লেনদেন। একই সঙ্গে বড় বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতগুটিয়ে বসে আছে।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
তবে বিশ্লেষকরা ধারণা করছে, দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধনের মধ্যে দুই সংস্থার মতভিন্নতার কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভব হচ্ছে না।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনা নিয়ে মতভিন্নতা, শেয়ারের দর বেড়ে গেলেও এক্সপোজার লিমিট অতিক্রম করে গেলে জরিমানা, বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমার মধ্যে থাকবে কি না- এই নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত পাঁচ কর্মদিবস ধরে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ।
এর মধ্যে এই বৈঠকটি ডাকার কথা নিশ্চিত করেছেন বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার এই বৈঠক হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি চিঠি ইস্যু করেছে জেনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু জানি না।’
বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়েছেন তারা এক্সপোজার লিমিট, বন্ডে বিনিয়োগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন।
কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বৈঠকে পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা, পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ জমা, পুঁঞ্জিভূত লোকসান থাকলে শুধুমাত্র সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদেরকে লভ্যাংশ দেওয়া ও বন্ডের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।
বড় বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতগুটিয়ে বসে আছে বলেই ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এই অবস্থায় দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই বৈঠকের খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরাতে পারে।
আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। আর এখানেই বিপত্তি।
ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যেই শেয়ার কিনলেও তার দাম বেড়ে গেলে বাজারমূল্যের ভিত্তিকে বিনিয়োগ গণনার কারণে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে আগেভাগেই। এতে পুঁজিবাজারে বিক্রয়চাপ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাজারে হচ্ছে দরপতন।
এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোকে হাতের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য করেছে। এর ফলে দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতেই পারছে না পুঁজিবাজার। শেয়ারদর কমে আসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এর মধ্যে আবার বন্ডের বিনিয়োগও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিনিয়োগ সীমার মধ্যে ধরছে। অথচ বিএসইসি এই বিনিয়োগকে ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার পক্ষে। তারা বলছে, সারা বিশ্বেই এই বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাইরে থাকে।
সরকার পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলতে অনুমতি দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডকে। আকর্ষণীয় মুনাফার এই বন্ডে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে। আর বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যায় বলে ব্যাংকগুলো হাতের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। যারা করেনি, তাদেরকে জরিমানার শিকার হতে হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সরাসরি বলেছেন, বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সীমার বাইরে থাকা উচিত, সারা বিশ্বেই এই রীতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছে বলেই তিনি মনে করেন।
আনন্দবাজার/এম.আর