চলতি মৌসুম থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে সরকার। এবারের আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান কেনার এই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এবার দেশের আট বিভাগের ১৬ উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে।
খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি গুদামে ধান সংগ্রহের জন্য ‘কৃষকের অ্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে কৃষক খুব সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।
খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন, বিক্রয়ের আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদ সম্পর্কিত তথ্য ঘরে বসেই এসএমএসের মাধ্যমে পাবেন কৃষক। বিক্রয়ের জন্য কোন তারিখে, কোন গুদামে যেতে হবে সেটাও এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ছয় লাখ টন আমন ধান কিনবে সরকার। এছাড়া ৩৬ টাকা দরে সাড়ে তিন লাখ টন চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনা হবে। ৩১ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
খাদ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, আমনে ‘কৃষকের অ্যাপ’র মাধ্যমে ধান বিক্রির জন্য আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন কৃষকরা। ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর। ২০ নভেম্বর থেকে ধান ও ১ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হয়ে চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমরা চাচ্ছি কৃষক যেন তার ঘরে বসে ধান বিক্রির আবেদনটা করতে পারে। কৃষকের ঘরে তার আত্মীয়ের কাছেও যদি স্মার্টফোন না থাকে সেক্ষেত্রে যাতে বাজারে গিয়ে কিংবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে সেটা করতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। নিবন্ধন ও আবেদন এই অ্যাপের মাধ্যমেই করতে পারবে কৃষক।
তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে ধান বিক্রির আগে কৃষক অনেকের কাছে যেত, এখন তার কিছুই করতে হবে না। কৃষককে শুধু গোডাউনে এসে ধান দিতে হবে। কোন গোডাউনে এবং কবে সে ধান দেবে সে তথ্যও তার কাছে চলে যাবে মেসেজের মাধ্যমে। সরকারের সঙ্গে সে সরাসরি লেনদেন করবে। তার টাকা ব্যাংকে চলে যাবে, সেখান থেকে সে তুলে নেবে।
অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ পরীক্ষামূলকভাবে সফল হলে, বোরোতে সারাদেশে ‘কৃষকের অ্যাপ’র মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে এবং চালও অ্যাপের মাধ্যমে মিলারদের কাছ থেকে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এবার আমনে অ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, নওগাঁ সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, ঝিনাইদাহ সদর, যশোর সদর, হবিগঞ্জ সদর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।
খাদ্য অধিদফতরের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইউনিটের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুর আলম বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অ্যাপটি তৈরি করেছে। অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ্রুভড হলে সে ধান বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারবে। পরে ইউএনও’র নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি আবেদনকারীদের মধ্যে লটারি করবে। লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত হয়ে যাবে, তাদের অনলাইনেই বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া একটা ওয়েটিং লিস্টও তৈরি করা হবে। নির্বাচিত কোনো কৃষক ধান না দিলে ওয়েটিং লিস্টে থাকা কৃষকের কাছ থেকে ধান নেয়া হবে। অ্যাপটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, এটি সহজে যে কেউ পরিচালনা করতে পারবে। কৃষকের স্মার্টফোন না থাকলে তিনি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েও সুবিধা নিতে পারবেন।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস