ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কায় উদ্যোক্তারা

ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কায় উদ্যোক্তারা
  • জ্বালানির দামের পারদ নামছে না
  • বেড়েছে কাচাঁমাল ও পরিবহন খরচ
  • উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে পোশাকখাতে

করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে প্রায় দেড় বছর পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশের রফতানিসহ সব ধরনের উৎপাদনমুখী শিল্পখাত। উৎপাদন খাতের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে গেল কয়েক মাস ধরে। করোনার অভিঘাতে যারা কারাখানা বন্ধ করে ঘরবন্দী হয়েছিলেন, তারা এখন কারাখানার গেট খুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

শিল্প প্রতিষ্ঠানে ফিরেছেন শ্রমিক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। রফতানিমুখী বড় বড় কারাখানাতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আতঙ্ক এখন উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। জ্বালানি তেলসহ কাঁচামালের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ‍পণ্য উৎপাদন নিয়ে এই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কাঁচামাল ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উপখাতসহ পোশাকখাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তাদের আশঙ্কা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে খরচ আরো বাড়বে। এতে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। শিল্প মালিকরা বলছেন, রফতানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য বেচাকেনা না থাকায় দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছি। আর এ সময়ের মধ্যে কারখানার পরিচালন ব্যয় ঠিকই বহন করতে হয়েছে। নিয়মিত শ্রমিকদের বেতনও দিতে হয়েছে। এ কারণে শুধু ব্যয়ই হয়েছে। করোনাকালে কারো কোনো আয়ের পথ ছিল না। এসব বিষয় হিসাবে নিয়ে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন ব্যয় অনেকগুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ১-৫৮ শতাংশ হারে। এর মধ্যে রয়েছে স্পিনিং কটন, সিল্ক, সিনথেটিক, জুট, হ্যান্ড লুম, ওয়্যারিং অ্যাপারেল, নিটওয়্যারসহ ১০টি উপখাতের ৯টির উৎপাদন ব্যয়। ডমেস্টিক্যালি প্রডিউসড ইন্ডাস্ট্রিয়াল গুডস ইনডেক্সের তথ্যানুযায়ী, স্পিনিং অ্যান্ড কটন টেক্সটাইল ফাইবারের উৎপাদন খরচই বেড়েছে ৫৬.২২ শতাংশ। টেক্সটাইলের বেড়েছে ১৩.৬২ শতাংশ। পোশাক শিল্পের মতো প্রায় ৯০ শতাংশ উপখাতের উৎপাদন ব্যয়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

গেল এক বছরে তুলার দাম শতভাগের বেশি বেড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএম) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলছেন, ফাইবারের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। প্রায় প্রতিটি কাঁচামালের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে সবারই উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তিনি মনে করছেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে সব খাতেরই উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।

এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন আহমেদ মাহিন বলেছেন, গেল এক বছরে ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শ্রমিক ও কারখানা বসিয়ে রাখার কারণে। এর ওপর আবার রাসায়নিকের দাম যেমন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, একই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়ও।

বিবিএসের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, দেশের ২০৯টি খাতের মধ্যে ১৭৫টিতেই উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি উৎপাদন খরচ বেড়েছে ট্যানারি এবং ফিনিশ লেদার খাতে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়েছে। লেদার প্রডাক্টের পরই উৎপাদন ব্যয় বেশি বেড়েছে ভেজিটেবল ওয়েলে। ট্যানারি ও লেদারগুডস শিল্প মালিকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে সব কাঁচামাল ও ফ্রেইট চার্জ বৃদ্ধি, সঠিক সময়ে কাঁচামাল আনতে না পারা ও শ্রমিক বসিয়ে রাখার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।

বিবিএসের তথ্যমতে, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৫-২৫ শতাংশ, খাদ্য পণ্যে ১২.৩৩ শতাংশ, ডেইরি বা দুগ্ধজাত পণ্যে ১.১৩ শতাংশ বেড়েছে। ভারী পণ্যের মধ্যে সিমেন্টে ৫ শতাংশ, স্টিল মিলসে ১১.৬৭ শতাংশ, ট্রান্সপোর্ট ম্যাটারিয়ালসে ৪-১০ শতাংশ এবং ফার্নিচারে ৪ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা শিল্প মালিকরা বলছেন, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে পণ্যের ব্যয় অন্তত ২০ শতাংশ হারে বাড়বে। তারা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ, পরিবহন খরচসহ সব ধরণের কাঁচামালের দাম বাড়বে। এর সঙ্গে বিপণন কর্মকর্তাদের খরচও বেড়ে যাবে। ফলে পণ্যের দামও বাড়াতে হবে। তারা আরো বলছেন, গেল কয়েক মাস ধরেই বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সব কিছুর উৎপাদন ও বিপণন ব্যয় বাড়বে। আর উৎপাদন খরচ বাড়লে টিকে থাকার ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন