রংপুর অঞ্চল
প্রয়োজন যুগোপযোগী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই পদক্ষেপ
ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, সস্তা শ্রমবাজার ও অবকাঠামো গড়ার বিপুল সম্ভবনা থাকা সত্তে¡ও রংপুর অঞ্চলে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ভারী শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে এ অঞ্চলে বেড়েই চলছে বেকারত্বের সংখ্যা। নেতৃত্ব শুণ্যতা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে জাতীয় উন্নয়নের মূলধারা থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম হয়েছে রংপুর অঞ্চলে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকার কারণে ব্যাপক ভিত্তিক শিল্প কলকারখানাও স্থাপন হয়নি। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত জনগোষ্ঠির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকার উদ্যোগ নিলে রংপুর অঞ্চলে অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠতে পারে।
রংপুর অঞ্চলের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, জাতীয় রাজনীতিতে রংপুরের মানুষের অসামান্য অবদান থাকলেও তারা এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে শুধু ব্যবহারই করছে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে কোন অবদান রাখছেন কোন জাতীয় নেতা। ফলে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এ বিভাগের ভাগ্যেও কোন উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এ অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি কোন শিল্প কারখানা।
জানা গেছে, এ অঞ্চলের খনিগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। যা দিয়ে গড়ে তোলা যেতে পারে চিনা মাটির কাঁচসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শাক-সবজি প্রক্রিয়াজাত করণ ব্যবস্থা, পোল্ট্রি, ডেইরী ফার্ম, মৎস্যসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা স্থাপন করা যেতে পারে। সরকারের উদ্যোগ ও সহায়তা পাওয়া গেলে এ অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে বিশাল শিল্পনগরী। পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচতে পারে। বাড়বে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। নিরাপত্তার দিক থেকেও এ অঞ্চল যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠার অপার সম্ভাবনাময় রংপুর অঞ্চলে ৩টি কয়লাখনিতে মজুদ রয়েছে ২ হাজার ১ শত ২৭ মিলিয়ন টন কয়লা।
এ কয়লা জ্বালানি খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই পদক্ষেপ। জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলে ৩টি কয়লাখনি, ১টি পাথরখনি, ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কয়েকটি স্থলবন্দর রয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়ায় অবস্থিত কয়লা খনি থেকে ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। উৎপাদিত কয়লা দিয়ে চালু করা হয়েছে কয়লা ভিত্তিক ২৫০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এ উপজেলার মধ্যপাড়ায় রয়েছে দেশের একমাত্র কঠিন শিলাখনি প্রকল্প। এ অঞ্চলে খনিজ স¤পদের উপযুক্ত ব্যবহার হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে দিতে পারে। এসব এলাকার সাথে রাজধানীসহ দেশের সব এলাকার সড়ক যোগাযোগ খুব সহজ। রয়েছে রেলপথ যোগাযোগের সুবিধা। রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ এ অঞ্চলের গুরত্বকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। যমুনা বহুমুখী সেতুর কারণে রংপুরাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ অঞ্চলের চাষাবাদকৃত ফসলের বাজারজাত করণ সমস্যা কিছুটা দুর হয়েছে। এ অঞ্চলের কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলনে সরকার উদ্যোগ নিলে রংপুর অঞ্চলে সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
রংপুরের পীরগঞ্জে আবিষ্কৃত দেশের একমাত্র লৌহখনি, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার শালবাহানের তৈলক‚প, উত্তোলনের মাধ্যমে বদলে দেয়া যাবে দেশের চিত্র। অথচ এসব খনিজ সম্পদ অদৃশ্য এক রহস্যময় কারণে আজো দেশবাসীর দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছে। এ নিয়ে জনমনে মাঝে-মধ্যে প্রশ্নের উদয় হলেও এতদিনেও কেন এ খনিগুলোর উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি এর সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। কৃষিতে রয়েছে রংপুর অঞ্চলে গৌরবময় অবস্থান। এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে। অথচ কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। কৃষিপণ্য ভিত্তিক কলকারখানা স্থাপন করা হলে এ অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে কৃষকরা। এ অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা স্থাপন হলে এখানকার উৎপাদিত কয়লা, শিল্প কলকারখানায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। মধ্য-পাড়ার উত্তোলিত কঠিন শিলা ব্যবহার করে টাইলস, মোজাইকসহ বিভিন্ন পাথর নির্ভর কলকারখানা স্থাপন করা হলে এ ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা কমবে।
লালমনিরহাটের বিমানবন্দর চালু করে এ জেলার কয়েক হাজার বেকারের কর্মসংস্থান করা যেতে পারে বলে মনে করেন সেখানকার সিনিয়র সাংবাদিক ড. শফিকুল ইসলাম কানু । তিনি বলেন, এ জেলার অসংখ্য পতিত জমিতে গড়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিক অঞ্চল । কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার ক্ষেত্রেও তাই । ওই সব জেলার দারিদ্রপীড়িত মানুষগুলোর জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।