কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ কে বা কোন প্রতিষ্ঠান করবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে উৎপাদনের জড়িতরা। সারাদেশ থেকে যে পণ্য রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় চলে যায় সেগুলোর দামেও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। একেক এলাকায় দেখা যায় একেক দাম। বলা যায় ঘাটে ঘাটে দাম বাড়তেই থাকে কৃষিপণ্যের দাম। আবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) যে দামে পণ্য বিক্রি করে তার সঙ্গে বাজারের প্রচলিত দামেও অসঙ্গতি দেখা যায়।
যারা কৃষিপণ্যের উৎপাদনে জড়িত বা সরাসরি উৎপাদক তারাও প্রকৃত দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষক যে দামে পণ্য উৎপাদন করে নামমাত্র লাভই হয় তার। অথচ তার সেই পণ্যই ভোক্তার কাছে গিয়ে দ্বিগুণ তিনগুণ দাম হয়ে যায়। সেই বাড়তি দাম কৃষকের ভাগ্যে জোটে না। বরং পণ্যের বাজারের মধ্যবর্তী পর্যায়ের ব্যবসায়ী বা পাইকাররা সেই লাভ পেয়ে থাকে। ফলে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেসব পণ্যের উৎপাদনে কৃষকের মনোযোগ বেশি হওয়ার কারণ থাকে না।
অপরদিকে, বেশি দামে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাত যতই বদলাতে থাকে ততই পণ্যের দাম বাড়ে। এই চক্র ভাঙতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে দাম নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। তবে কে বা কারা কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান পণ্যের কেন্দ্রীয় দাম নির্ধারণ করবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই জাতীয়ভাবে।
টিসিবির সহকারি পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার আনন্দবাজারকে বলেন, কৃষিপণ্যের বাজার নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। কেননা এসব পণ্যদ্রব্য দেশের নানা জেলা থেকে এসে থাকে। যেমন শিম চট্টগ্রাম, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ বা রংপুর থেকে এলো। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খরচ হয়েছে। তাতে করে তো বাজার দর নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।
দাম নির্ধারণ না থাকায় কৃষকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো বঞ্চিত হন। বাজার দর নির্ধারণ করে দিলে অন্তত তারা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির এই সহকারি পরিচালক বলেন, এটি আসলে হয়ে উঠে না। তবে দেশের মানুষ যে চাল বেশি খায় এমন কিছু চালের বাজার দর জাতীয়ভাবে নির্ধারণের চিন্তা করা হচ্ছে। কেননা দেশে ১৪৩ প্রকারের চাল রয়েছে। সব তো দাম নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না।
টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির আনন্দবাজারকে জানান, টিসিবি সাধারণত কোন পণ্য কোন বাজারে কত টাকায় বিক্রি হয় তা লেখে রাখে। দাম নির্ধারণ করে না। তবে যদি কোনো পণ্যের সংকট দেখা দেয় তখন সেটির দর নির্ধারণ করা হয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে।
এ ব্যাপারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (পিপি) বেগম শাহনাজ বেগম নীনা আনন্দবাজারকে জানান, তারা বিভাগভিত্তিক নানান ধরনের কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ ও মনিটরিং করে থাকেন।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, চলমান বাজারের সঙ্গে টিসিবি, কৃষি অধিদপ্তরের বিপণন বিভাগের সঙ্গতি নেই বললেই চলে। রাজধানী থেকে দেশের অন্যান্য সব বাজারেই পাইকাররা নিজেরাই দাম নির্ধারণ করে থাকেন। কারো ধার ধারেন না। এতে দেখা যায় পণ্যসামগ্রীর বাজারে কৃষকরা ন্যায্য দাম পায় না। বাজারভেদে দামের বড় ধরনের হেরফের দেখা যায়। রাজধানীর এক বাজার থেকে আরেক বাজারের দামেও বড় পার্থক্য।
টিসিবির তথ্যে দেখা যায়, চাল সরু (নাজির/মিনিকেট) প্রতিকেজির দাম বর্তমানে সর্বনিম্ন ৫৬ হতে ৬৮ টাকা। অথচ গেল বছরের একই সময়ে দাম ছিল ৫৫ হতে ৬২ টাকা। গড়ে ৫ দশমিক ৯৮ টাকা বেড়েছে। চাল (মাঝারী) পাইজাম/লতা ৪৮ হতে ৫৫ টাকা ও ৪৮ হতে ৫৬ টাকা, গড়ে শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ কমেছে। চাল (মোটা)/স্বর্ণা/চায়না ইরি ৪৫ হতে ৪৮ ও ৪৫ হতে ৪৮ টাকা, দাম বাড়েনি। আটা সাদা (খোলা)প্রতি কেজি ৩৩ হতে ৩৫ ও ২৮ হতে ৩০ টাকা, বেড়েছে ১৭.২৪ শতাংশ। আটা (প্যাকেট) প্রতি কেজি ৩৮ হতে ৪৫ ও ৩০ হতে ৩৬ টাকা, বেড়েছে ২৫.৭৬ শতাংশ।
সয়াবিন তেল (লুজ) প্রতিলিটার ১৪০ হতে ১৪৫ ও ৯৭ হতে ১০০ টাকা, বৃদ্ধি ৪৪.৬৭ শতাংশ। সয়াবিন তেল (বোতল) ৫ লিটার ৭০০ হতে ৭৬০ ও ৪৮০ হতে ৫২০ টাকা, বৃদ্ধি ৪৬ শতাংশ। সয়াবিন তেল (বোতল) ১ লিটার ১৫০ হতে ১৬০ ও ১০৫ হতে ১১০ টাকা, বৃদ্ধি ৪৪.১৯ শতাংশ। পাম অয়েল (লুজ) প্রতিলিটার ১৩০ হতে ১৩৫ ও ৮৬ হতে ৯০ টাকা, বৃদ্ধি ৫০.৫৭ শতাংশ। মশুরডাল (বড় দানা) প্রতি কেজি ৮৫ হতে ৯০ ও ৭০ হতে ৮০ টাকা, বৃদ্ধি ১৬.৬৭ শতাংশ। পিঁয়াজ (দেশি) প্রতি কেজি ৬০ হতে ৬৫ ও ৬০ হতে ৭০ টাকা, বৃদ্ধি ৩.৮৫ শতাংশ।
পিঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ হতে ৫৫ ও ৩৫ হতে ৪৫ টাকা, বৃদ্ধি ৩১.২৫ শতাংশ। দেশি রসুনের দাম কমলেও বেড়েছে আমদানিকৃতটির। রুইমাছ প্রতি কেজি ২৫০ হতে ৩৫০ ও ২০০ হতে ৩০০ টাকা, বৃদ্ধি ২০ শতাংশ। গরু গোস্ত প্রতি কেজি ৫৮০ হতে ৬০০ ও ৫৫০ হতে ৫৮০ টাকা, বৃদ্ধি ৪.৪২ শতাংশ। খাসির গোস্ত প্রতি কেজি ৮০০ হতে ৮৫০ ও ৭৫০ হতে ৮৫০ টাকা, বৃদ্ধি ৩.১৩। মুরগি (ব্রয়লার) প্রতি কেজি ১৫০হতে ১৬০ ও ১২০হতে ১৩৫ টাকা, ২১.৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক