ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমবে ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয়

কমবে ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয়

পেরিলায় কমবে ভোজ্যতেলের আমদানি

সাউ পেরিলা-১ নামে নতুন জাতের এ পেরিলা দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার হয়। এটি ক্ষতিকারক ইউরেসিক এসিডমুক্ত ও ৯২ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। পেরিলা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।

উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ নতুন তেলজাত ফসলের নাম পেরিলা। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনামসহ ভারতের কিছু অঞ্চলে এর চাষ হয়। পেরিলা একটি ভোজ্যতেল ফসল যার বেশির ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এর তেল আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষ করে হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এমন ভোজ্যতেল জাত ফসলের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। স্বাস্থ্যকর এ তেলজাত ফসলে সফলতা আসলে দেশের তেল আমদানিতে যে বিপুল অর্থ খরচ হয় তা সাশ্রয় হবে।

২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুক‚লে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) নামে বাংলাদেশে প্রথম এর একটি জাত নিবন্ধিত হয়। জাতটি এখন মাঠ পর্যায়ে চাষ শুরু হয়েছে।

রাজশাহীর বাঘায় এ প্রথম পেরিলা চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ৩ বিঘা জমিতে পেরিলা চাষ হয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের হেলালপুর ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামে পরীক্ষামূলক পেরিলা চাষাবাদ করা হয়েছে।
জমিতে গাছ ও লতা পাতা দেখে আবাদে সফলতা আসবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। এছাড়াও অন্য কৃষকদের মধ্যেও পেরিলা চাষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অল্প পরিশ্রমে কম খরচে পতিত জমিতে পেরিলা চাষাবাদ লাভজনক বলে জানায় কৃষি অধিদপ্তর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যানুযায়ি, বাংলাদেশে মোট ভোজ্যতেলের চাহিদা ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। এর মূল্য ৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ২৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। আমাদের দেশে তেলফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা, তিল এবং সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ ভাগ তেল ফসলের আবাদ হয়। দেশে মোট ৪ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২ দশিমক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।
পেরিলা পতিত জমি ও যেসব জমিতে বাগান করা আছে সেসব জমিতেও চাষ করা যাবে। পেরিলা চাষে সফলতা আসলে আগামীতে ভোজ্যতেল আমদানি কমবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সাশ্রয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে দেশের ১৭টি জেলায় প্রথম পেরিলার চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঘা উপজেলাতেও এর চাষ করা হয়েছে। খরিফ-২ মৌসুমে সাধারণত আম বাগানসহ বিভিন্ন ফল বাগান পতিত থাকে। যেখানে সাধারণত পানি জমে না এবং হালকা ছায়া পড়ে এমন জমিতে সহজেই পেরিলা চাষাবাদ করা যায়। মাত্র তিন মাসে এ ফসল ঘরে তুলে রবি ফসলে যেতে পারবেন কৃষকরা। যা হলো- জুলাই মাসে বীজতলায় বীজ বপণ করে ২৫-৩০ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। তা হলো-আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে।

পেরিলার পুষ্টি গুণ সম্পর্কে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সাউ পেরিলা-১ নামের নতুন জাতের এ পেরিলা ভোজ্য তৈল দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহার হয়। পেরিলা তেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য উচ্চমাত্রায় ৫১ ভাগ ওমেগা-৩ এবং ফ্যাটি এসিড বা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ এবং ২২ ভাগ লিনোলিক এসিড বা ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। এটি ক্ষতিকারক ইউরেসিক এসিড মুক্ত ও ৯২ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম বলেন, পেরিলা সাধারণত বীজতলায় থেকে সংগ্রহ পর্যন্ত প্রায় ৯০ থেকে ১০০ দিন সময় লাগে। খুবই কম পরিমাণ সার লাগে। রোগ বালাই নাই বললেই চলে। বিঘা প্রতি মাত্র ৩-৪ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়। বিঘায় প্রায় ৪ মণের মত ফলন পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ হাজার টাকা। পেরিলা চাষের জমি থেকে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু আহরণও সম্ভব। তাছাড়া, কচি পেরিলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং পেরিলার পাতার চা বানানো যায়।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পেরিলার জমিতে মৌমাছির আনাগোনা। সেখানে কথা হয়, কিশোরপুর ও হেলালপুরের পেরিলা চাষি সাজদার রহমান ও সোহেল রানার সাথে। তারা বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথম বারের মত আবাদ করেছি। যেখানে পেরিলা আবাদ করেছি, আগে সে জমি খালিই পড়ে থাকতো। কৃষিবিদ স্যাররা পেরিলা আবাদি জমি পরিদর্শনে এসে কখন কি করতে হবে পরামর্শ দেন। আর কয়েকদিন পর আবাদি ফসল ঘরে তুলবো। আশা করছি ভালো ফলন পাবো। পতিত জমিতে আমাদের ফসল দেখে অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তারা।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন