ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা কেটে নবান্ন উৎসব

করোনা কেটে নবান্ন উৎসব

ধানের দাম ভালো, সংকট শ্রমিকের

পহেলা অগ্রহায়ণ আজ। বছর ঘুরে আবার এসেছে নবান্ন উৎসব। আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। বাড়ির উঠানে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। নবান্ন উৎসব অনাদিকাল থেকে বাঙালির জীবনের অংশ। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।

এ উৎসবকে ঘিরে গ্রামবাংলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণী। করোনা সংকট ও বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি মৌসুমে আগাম জাতের আমন ধান চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। গ্রাম অঞ্চলে চলছে নবান্ন উৎসবের আমেজ। মরা কার্তিক শেষ। শুরু হয়েছে সমৃদ্ধির অগ্রহায়ণ। নতুন চালে হবে নবান্ন। ঘরে ঘরে চলবে পিঠাপুলির আয়োজন। কার্তিকের দিন শেষে, অবশেষে কিষাণীদের নতুন গানে, নতুন চালের ঘ্রাণে, আজকের এ অগ্রহায়ণে, ঘরে ঘরে হেমন্তের নবান্ন উৎসব।

প্রতিবারের মতো এবারও অগ্রহায়ণের শুরুতে সোনার ফসলে ভরে উঠেছে কৃষকের জমি। হেমন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে খেলা করছে পাকা ধানের শীষ। আপন মনে হেলছে দুলছে। দেখে মন ভরে যায়। সোনালি ফসলের দিকে তাকিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। ধান কাটার কাজও শুরু হয়ে গেছে দেশের সকল জেলায়। এ নিয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন আনন্দবাজারের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি রবিউল হাসান জানান, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় চলছে ধান কাটার ধুম। আকাশে কুয়াশা আর শিশিরের লুকোচুরির মধ্যেই কাস্তে হাতে ধান কেটে চলছে শ্রমিকের দল। নতুন ধান পেয়ে খুশি চাষীরা। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে বদলে গেছে কৃষক। মুহুর্তে শত শত হেক্টর ধান মাড়াই শেষ হচ্ছে। মুহুর্তেই গোলায় ধান ভরছে কৃষক। এদিকে বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শত টাকায়। এতে খুশি প্রান্তিক কৃষকরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলার ৮৫ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়। চাষাবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। গত ২০ নভেম্বরে বন্যার পানিতে ডুবে ৩০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ বন্যায় কৃষিখাতে আর্থিক ক্ষতি প্রায়কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় এলাকার আলাউদ্দিন জানান, এবার প্রতিবিঘায় ধান পেয়েছেন ২০ থেকে ২৫ মন। আশা করি এবার সুখে শান্তিতে পরিবার নিয়ে চলতে পারবো।

হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা বাড়াইপাড়া গ্রামের শিউলী বেগম বলেন, এবার ধান মেশিনে কেটে আবার মেশিনে মাড়াই করছি। গত বছরের তুলনায় কষ্ট কম হয়েছে। তিনি আরও জানান, ধান সিদ্ধ শেষে নতুন ধানে ভাত খেতে শুরু করছি। ধান বিক্রি করে মানুষের ঋণ পরিশোধ করে জমিতে ভুট্টা লাগনোর জন্য জমি তৈরি করছি।

পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার কৃষক আজিবর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ধান অনেক ভালো হয়েছে। তবে কিছুু ধানক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমেন ধান কম হয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ জমির আগাম জাতের ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার আগাম জাতের আমন ধানের ফলন বেশি হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে। চাষাবাদে খরচের তুলনায় এবার বাজারে ধানের দাম বেশি। তাই কৃষক আনন্দিত।

চলতি মৌসুমের আগাম আমন ধান বেচে তারা বেশ লাভবান হতে পারবে বলেই আশা।

ডিমলা প্রতিনিধি, মাসুদ পারভেজ জানান, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় পাকা ধান কাঁটতে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। দুই দফা বন্যার পর একটু দেরিতে হলেও মাঠে মাঠে সোনালি পাকা আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে অনাবিল সুখের হাসি ফুটে উঠেছে। এ যেন শত দু:খ-কষ্টের পরে একটু সুখের ছোঁয়া। মাঠ থেকে নতুন ধান বাড়িতে তোলার জন্য আঙ্গিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন কৃষাণীরা। গত বছরের তুলনায় চলতি আমন মৌসুমে ফলন ভালো ও দাম বেশি হওয়য় কৃষকও বেশ খুশি।

ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৪৪৩ হেক্টর জমিতে ৪৯ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অধিক জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় দুইবারের বন্যায় কয়েকটি ইউনিয়নের ৮৭০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও এবার আবহাওয়ার অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, রোপনের পর ধান গাছে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। অনেকবার কীটনাশক স্প্রে করার ফলে ফসলকে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। ফলন খুব ভাল হয়েছে। নতুন ধান পেয়ে আমি আনন্দিত।

কৃষক মহসিন বলেন, এ বছর ফসলে ব্যাপক পোকামাকড়ের আক্রমন হওয়াতে খরচের পরিমাণ বেশি হয়েছে। মাঝামাঝির দিকে খরায় ক্ষতি করলেও শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়াতে ধানের খুব উপকার হয়েছে। ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক জায়গায় নির্বাচন থাকায় বাহির থেকে কাজের লোকজন চাহিদামত না আসায় শ্রমিকের মজুরি এবার একটু বেশি। যার ফলে প্রতিশতক ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে ধান কাটতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমন ধান কাটা-মাড়াই চলছে। এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এ অঞ্চলে কৃষকরা ধান কেটে ভুট্টা, আলু, গম, সরিষা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রবিশস্যের চাষাবাদ করেন। এ জন্য দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আকস্মিক বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষক।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন