ঢাকা | শুক্রবার
২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এদেশের চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপি

সভাপতি, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন শাহিন আহমেদ

করোনা মহামারীর কারণে সমগ্র চামড়াখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। করোনার আগে বায়ারদের (ক্রেতা) দেয়া অনেক অর্ডার করোনা শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে বাতিল করা হয়েছে। আগের মতো এখন আর অর্ডারও পাওয়া যায় না। গত বার করোনার কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে ঈদুল আযহা পালিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে পারেনি।

একদিকে বিক্রি কমেছে অন্যদিকে কাঁচামচামড়া সংগ্রহ কম হয়েছে। এরই মধ্যে করোনাকালিন সংকটের কারণে এদেশের অনেক ট্যানারির মালিক চামড়া ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। অনেকে কোনো মতে টিকে আছে। তবে এখন পরিস্থিতি খুব ধীরে ধীরে ভালোর দিকে যাচ্ছে।

চামড়াখাতের সার্বিক পরিস্থিতি সামনে রেখে আনন্দবাজারকে দেয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, করোনাকালিন সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। না হলে এদেশের চামড়াখাত পাটখাতের মতো শেষ হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে চামড়াখাতের পুরানো এ উদ্যোক্তা শাহিন আহমেদ আরো বলেন, আমাদের দেশে জনসম্পৃক্তখাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই চামড়াখাতের বিস্তার। গত কয়েক বছর থেকে চামড়াখাতের ব্যবসা ধারাবাহিকভাবে লোকসানে আছে। ব্যবসায়ীরা পুঁজি ভেঙে চলছে।

করোনার কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলা করতে হলে চামড়া ব্যবসায়ীদের আগের যে কোন সময়ের চেয়ে কৌশলী হতে হবে। ধৈর্য্য ধরে যে কোনো কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকেও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আন্তরিক হতে হবে। চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী দ্রুত আর্থিক ও নীতি সহায়তা দিতে হবে।

চামড়া ব্যবসায়ীরা পরিবেশ বান্ধব ভাবে ব্যবসা করতে আগ্রহী জানিয়ে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, এখন ব্যবসা করে টিকে থাকতে হলে কারখানায় আর্ন্তজাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ব্যবসা করতে হবে এটা আমরা জানি। এর জন্য কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার থাকতে হবে। ডাম্পিং ইয়ার্ডে কঠিন বর্জ্য জমা রাখতে হবে। আমাদের এখানে সরকার সিটিপি নির্মাণ করে দিয়েছে। ডাম্পিং ইয়ার্ডও সরকার নির্মাণ করছে। এসব সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা বা কাজ করছে কিনা তা সরকারের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে চামড়াখাতের ব্যবসায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ব্যবসায়ী নেতা শাহিন আহমেদ বলেন, এদেশের পশুর চামড়া প্রাকৃতিকভাবেই গুণগত মানের। বিশ্বব্যাপী আমাদের দেশের প্রক্রিয়াজাত চামড়া, কাঁচা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা আছে। এদেশের চামড়াখাতের সম্ভাবনা অনেক। চামড়াখাতের ব্যবসায়ীদের নীতি ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হলে এদেশের অর্থনীতিতে ইতোবাচক প্রভাব পড়বে।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরো বলেন, এদেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের লোকসানের অন্যতম কারণ সাভার চামড়া শিল্প নগরী সম্পূর্ণ প্রস্তুত না করেই হাজারীবাগ থেকে আমাদের সেখানে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। তখন জানানো হয়েছিল সাভার চামড়া শিল্প নিমার্ণের কাজ শেষ। ট্যানারির মালিকরা গেলে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। আসলে বী হয়েছে, আমরা সমস্যায় পড়েছি। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে যে অর্থের প্রয়োজন ছিল তা আমরা পাইনি। ধার দেনা করে ট্যানারি নির্মাণ করেছি। সেই থেকে আর্থিক সংকট শুরু। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া খাতের ব্যবসায়ে ধস নামে। আমরা সময়ের সঙ্গে কোনো রকমে টিকে আছি। ব্যবসা করে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছি না।

শাহিন আহমেদ আরো বলেন, চামড়াখাতে আমাদের মূল প্রতিযোগি দেশ ভারত ও চীন। এ দুই দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা যেসব সুবিধা পায় আমরা তা পাই না। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানে থেকেও অর্থনৈতিক শক্তিশালী এই দুই দেশের সঙ্গে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা করে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যবসায়ী আরো বলেন, প্রতি বছর আমাদের দেয়া ঋণের যে অর্থ পরিশোধ করি তা ঈদুল আজহায় দেয়া হয়। এই অর্থ দিয়ে পশুর চামড়া কিনলেও উৎপাদিত পণ্য ভাল ভাবে বিক্রি করতে পারছি না। এভাবে এদেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, এদেশের চামড়াখাত সফলতার সঙ্গে আবারো উঠে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলে এদেশে নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে যাবে। অনেক মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। চামড়া শিল্পের প্রধান কাঁচামাল পশুর চমড়া। এদেশে সাধারণ পরিবারে পশু পালন করা হয়। এর জন্য বড় কোনো আয়োজন নাই। তাই চামড়াখাতের কাঁচা মালের যথেষ্ট সরবরাহ আছে। এখন চামড়াখাতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করলেই আমরা ভালোভাবে টিকে থাকতে পারবো।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন