ঢাকা | রবিবার
১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি চামড়া পণ্যের বিশ্ববাজার দখল

বাংলাদেশি চামড়া পণ্যের বিশ্ববাজার দখল

দেশের ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগলের চামড়া বিশ্বখ্যাত

দীর্ঘকাল ধরেই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গরু, ছাগল ও মহিষের চামড়ার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগলের চামড়া বিশ্বখ্যাত। গেল প্রায় দুই দশকে এ খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে বিশ্বে প্রথম শ্রেণির চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বিপুলসংখ্যক পশুপালনের জন্য রয়েছে সবুজ ঘাস ও খামার। যে কারণে দেশে তৈরি করা চামড়ার গুণগত মান অনেক ভালো। প্রতি বছর দেশে প্রায় আড়াই কোটি গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া জবাই করা হয়। খোলাবাজারে জবাই আর বিক্রি ছাড়াও কোরবানি, মিলাদ, বিবাহ, সুন্নতে খতনাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তুলনামূলক বেশিসংখ্যক পশু জবাই করা হয়। এর মধ্যে একমাত্র কোরবানির পশুর মাধ্যমেই সারাবছরের ৪৫ শতাংশ চামড়া উৎপাদন হয়।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর অর্ধেকের বেশি সংগ্রহ করা হয় কুরবানির ঈদের সময়। মোট চামড়ার ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং মাত্র ১.২০ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। বিপুল পরিমাণ চামড়াজাত কাঁচামাল সুপরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে বাংলাদেশি চামড়া। ৯৫ শতাংশ কাঁচা চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, প্রধানত আধাপাকা ও পাকাচামড়া, চামড়ার তৈরি পোশাক এবং জুতা হিসেবে বিদেশে বাজারজাত করা হয়। এ থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করায় রফতানিখাতের পণ্য হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে।

কাঁচা চামড়ার গুণগতমান ভালো হওয়ায় আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের ব্যাপক সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার পাশাপাশি চামড়া থেকে তৈরি জুতা, ব্যাগ, জ্যাকেট, হাতমোজা, ওয়ালেট, বেল্ট, মানিব্যাগসহ চামড়ার তৈরি হস্তশিল্প পণ্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজারের ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ০.৫ ভাগ রপ্তানি করে। স্বাধীনতার পর ৩৫টি মাঝারি ট্যানারির মধ্যে অবাঙালিদের মালিকানার ৩০টি ট্যানারি সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে এসব ট্যানারি লাভজনক শিল্পে রূপ নিতে পারেনি। ফলে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়ায় এসব ট্যানারি ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়।

সূত্রমতে, বিশ্বে জুতার মোট বাজারের মাত্র এক দশমিক ৭ শতাংশের অংশীদার বাংলাদেশ। এ খাতে বিশ্ববাজারের ৫৫ ভাগ দখল নিয়ে শীর্ষে চীন। এরপরেই ভারত ও ভিয়েতনামের অবস্থান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামীতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য জাতীয় অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে।

বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বেশি নয়। তবে শিল্পের আধুনিকায়নের পরিকল্পনায় অনেক অনেক দেশই আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের চামড়া শিল্পখাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ইতালি। গত ১৪ ন‌ভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিসিক ভবনে বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসানের স‌ঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনযিয়াতা।

সংবাদটি শেয়ার করুন