ঢাকা | রবিবার
২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশে প্রাধান্য

দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশে প্রাধান্য

আসছে শিল্পনীতি-২০২১

  • চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সমন্বয় করে গড়া হবে সমৃদ্ধ শিল্পখাত
  • শিল্পায়নে নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো হবে
  • ব্যবস্থাপনারসহ সব স্তরে দক্ষতা বাড়ানোর দিকনির্দেশনা
  • বর্জ্য শোধনাগার না থাকলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
  • মেধাসম্পদ সংরক্ষণ-ব্যবস্থাপনায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা
  • আর্ন্তজাতিক মানদণ্ডে শ্রমিকদের দেনা-পাওনা

অভ্যন্তরীণ সম্পদের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রণিত হচ্ছে শিল্পনীতি-২০২১। এবারের শিল্পনীতিতে দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশ, বেসরকারি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী ও আমদানি বিকল্প শিল্পের প্রসার ও দেশের সব অঞ্চলে সুষমভাবে শিল্প স্থাপনের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আসন্ন শিল্পনীতি কার্যকরী থাকবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। স্টার্টআপ ফাইন্যান্সিং এবং ক্রেডিট গ্যারান্টির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ বা এসএমইখাতের প্রসারে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এ নীতিতে।

জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এবিষয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেছেন, এর মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা অর্জন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি সমৃদ্ধ শিল্পখাত গড়ে তুলতে জাতীয় শিল্পনীতিমালা প্রণয়ের কাজ শুরু করেছে সরকার। এ নীতিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী নিয়ম গ্রহণ করা হবে। নীতিমালায় কারখানার পরিবেশের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ নীতিমালা অনুযায়ী আগামীতে দেশে শিল্পখাত পরিচালনা হবে। বর্তমানে শিল্পনীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী শিল্পখাত পরিচালিত হচ্ছে। নতুন শিল্পনীতিমালা চূড়ান্ত হলে বর্তমান শিল্পনীতিমালা বাতিল বলে গণ্য হবে।

এবারে প্রণিত শিল্পনীতিমালায় প্রত্যেক শিল্প কারখানায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার রাখার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হবে। বর্জ্য শোধনাগার না থাকলে আমদানি-রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হবে না। বাংলাদেশ পানি আইন ২০২০ এর আলোকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত হবে। কারখানায় আর্ন্তজাতিক মানদণ্ড মেনে শ্রমিকদের দেনা পাওয়ার বিষয় উল্লেখ থাকবে। এবারের শিল্পনীতিতে ক্ষুদ্র, মাঝারী, বৃহৎ, মাইক্রোসহ সব ধরনের শিল্পের সংজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে হালনাগাদ করা হবে। মেধাসম্পদ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকবে। শিল্পায়নে নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো হবে। ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ শিল্পের সকল স্তরে দক্ষতা বাড়াতে দিক নির্দেশনা থাকবে।

সরকারি বেসরকারি অংশিদারিত্বে শিল্পনগরী স্থাপন, শিল্পোন্নত এবং শিল্পে অনুন্নত এলাকা চিহ্নিত করে শিল্পের বিভিন্নখাতের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে। এখানে বিনিয়োগে অনাবাসি বাংলাদেশিদের বিদেশি উদ্যোক্তাদের সমান সুবিধা এবং রফতানিমুখী শিল্পে ঋণপত্র বা বিক্রয়চুক্তির বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে। শিল্পনীতিতে দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি ও সরকারিখাতের অংশিদারিত্বের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত এবং সুষমকরণে জোর দেওয়া হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারিদের আস্থা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা, দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

শিল্পনীতিতে উচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত শিল্পখাতকে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব শিল্পে প্রণোদনা, অব্যাহতি, রাজস্ব সুবিধা, ব্যাংক ঋণসহ সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা সবোর্চ্চ গুরুত্ব সহকারে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বিনিয়োগ বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। উচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে কৃষি বা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পর্যটন শিল্প, হিমায়িত মৎস্য শিল্প, হোম টেক্সটাইল শিল্প, আইসিটি বা সফটওয়্যার শিল্প, পাট ও পাটজাত শিল্প, ঔষধ শিল্প, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প,বাইসাইকেল শিল্প উল্লেখযোগ্য।

উচ্চ অগ্রাধিকার খাতের তালিকায় থাকা শিল্পের পরেই গুরুত্ব দেয়া হবে অগ্রাধিকার শিল্পখাতের আওতায় থাকা শিল্পখাতগুলিকে। জনশক্তি রপ্তানি, পরিবেশসম্মত জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, বেসিক কেমিক্যাল রং রাসায়নিক দ্রব্য, অ্যাক্টিভ ফার্মাসিটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট শিল্প ও রেডিং ফামার্সিটিক্যাল শিল্প, ভেজষ ঔষধ শিল্প, তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও প্রয়োগ শিল্প, পলিমার উৎপাদন শিল্প, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, অটোমোবাইল, হস্ত ও কারু শিল্প, চা শিল্প, সিরামিকস, টিস্যু গ্রাফটিং ও বায়োপ্রযুক্তি, জুয়েলারি, খেলনা, কনটেইনার সার্ভিস, ওয়্যারহাউজ, নব উদ্ভাবিত ও আমদানি বিকল্প শিল্প, প্রসাধানী ও টয়েলেট্রিজ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে অগ্রাধিকারখাতের তালিকায় রাখা হবে।

উদ্যোক্তাদের পরামর্শে উচ্চ অগ্রাধিকার এবং অগ্রাধিকারখাতে তালিকা আরো বড় করা হতে পারে। শিল্পনীতিতে লোকসানি সরকারি কলকারখানা ব্যক্তিখাতের মতো লাভজনক এবং প্রতিযোগি হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলা হবে। শিল্পনীতিতে শিল্পোন্নত এলাকা হিসেবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর ও বগুড়া জেলা চিহ্নিত করা হবে। এর বাইরে আরো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শিল্প নীতিতে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হবে। শিল্পে অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকার জন্য মূলধনী বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর্তুকি, উৎপাদিত পণ্যের ওপর থেকে কর ও শুল্ক অব্যাহতি, অ্যাক্রিডিটেশন সনদের ফি এবং প্রিমিয়ামের খরচের পুনর্ভরণের ব্যবস্থা এবং চলতি মূলধনের সুদের ওপর ভর্তুকি দেওয়া হবে।

গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্প, কৃষি ও মৎস্যখাত, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুর খামার এবং ডেইরি শিল্পের জন্য নূন্যতম মূল্য সংযোজন কর এবং ক্ষেত্রবিশেষে অব্যাহতি প্রদান করা হবে। স্থানীয় শিল্পে ব্যবহারে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হবে। স্থানীয় মোটর সাইকেল, রেফ্রিজারেটর, হার্ডবোর্ড শিল্পে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন