দেশের বাজারে নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে রডের দাম। এতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এই নির্মাণসামগ্রীর দাম।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন ভালো মানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) এক টন রডের দাম খুচরা পর্যায়ে উঠেছে সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকা। এর আগে দেশে রডের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ওয়ান ইলেভেনের (২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা-হানাহানি) সময়। সে সময় দেশজুড়ে দেখা দেওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে এক টন রড বিক্রি হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। শুল্ক করও বেড়েছে। আবার রডের কেমিক্যাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই কেমিক্যালের দামও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়েই এখন রডের দাম বেশি।
রডের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে বেড়েছে তেল ও গ্যাসের দাম। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। সব মিলিয়ে রডের কাঁচামাল আমদানি করে আনতে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে। মূলত এ কারণেই রডের দাম বেড়ে গেছে।
তারা জানান, মহামারি করোনার কারণে নির্মাণকাজে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছিল। তবে এখন নির্মাণকাজ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বেড়েছে রডের চাহিদা। একদিকে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়তি চাহিদাও রডের দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন (১৪ নভেম্বর) ভালো মানের বা ৬০ গ্রেডের এক টন রড কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৭ থেকে ৮১ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই টনপ্রতি রডের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, সাধারণত রডের দাম ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বাড়ে। এবার কয়েক মাসে আগ থেকেই রডের দাম বাড়া শুরু হয়ে গেছে। এখন যে হারে রডের দাম বাড়ছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে এক টন রডের দাম ৯০ হাজার টাকা হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এখন ৬০ গ্রেডের রড ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খুচরা পর্যায়ে ৬০ গ্রেডের রড ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৮০ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। যা এক বছর আগে ছিল ৭৩ হাজার থেকে ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
রডের দামের বিষয়ে পুরান ঢাকার নওয়াব ইউসুফ রোডের ব্যবসায়ী তিয়াস বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রডের ব্যবসা করছি। এর আগে কখনো এভাবে রডের দাম বাড়তে দেখিনি। এখন প্রায় প্রতিদিন রডের দাম বাড়ছে। রাতে যে দামে বিক্রি করছি, সকাল হতেই দেখা যাচ্ছে টনে ৫০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে।
বিএসআরএম স্টিলের কোম্পানি সচিব শেখর রঞ্জন কর বলেন, আজ (১৪ নভেম্বর) আমাদের রডের দাম ৮০ হাজার টাকায় উঠেছে। এটাই ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এর আগে কখনো রডের এত দাম হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে রডের দামও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এখন স্ক্র্যাপ প্রায় ২০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সামনে রডের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়লে সামনে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। আর স্ক্র্যাপের দাম কমলে রডের দাম ধপ করে পড়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করছে। তবে স্ক্র্যাপের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।
আনন্দবাজার/এম.আর