পুঁজিবাজারে এখন ৪৮ ব্যাংকের সম্মিলিত বিনিয়োগ প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। যা গড়ে ব্যাংকগুলোর রেগুলেটরি মূলধনের মাত্র ১৫ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার বাধার কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছে না শেয়ারবাজারে। পুঁজিবাজার তদারকি সংস্থা বিএসইসি প্রধান বলছেন, বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণেও বাধা হিসেবে কাজ করছে ব্যাংকের নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমা।
দেশে ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আছে ৪৮ ব্যাংকের। তবে হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে মাত্র চারটি ব্যাংকের। এগুলো হলো: সিটি ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও ব্র্যাক ব্যাংকের। সবচেয়ে কম বিনিয়োগ রয়েছে এবি ব্যাংকের। মাত্র ২৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আইন অনুযায়ী একক রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে ব্যাংকগুলো। যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের বাধা তৈরি করছে শেয়ারবাজারে।
কোম্পানি আইন ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ব্যারিস্টার এ এম মাসুম বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে যদি গভীরতা আনতে চান তাহলে ইন্সটিটিউশনাল ইনভেস্টরের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এবং সেই জন্য একটা নির্দিষ্ট যে আইন আছে, সেখানে ২০ শতাংশ একটা সীমা দেয়া আছে। কিন্তু সেই সীমার ভেতরেও বন্ড ও ডিরাইভেটিভ সক ইনক্লুডেড। তাহলে কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেটে ইন্সটিটিউশনাল ইনভেস্টর বা ব্যাংকিং সেক্টর কমে যাচ্ছে।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ গণনা করা হয় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে। এটি কেনা দামের ওপর নির্ধারিত হলেই জটিলতা কমবে মনে করছে বাজার বিশ্লেষকরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন এফসিএ জানান, ব্যাংক ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলোর কিন্তু একটা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। কারণ যখনই দেখা যাচ্ছে তার ইনভেস্টেড শেয়ারের দাম বেড়ে যাচ্ছে, তখন তার কিছু ইনভেস্টমেন্ট অফলোড করে বাংলাদেশ কর্তৃক নির্দেশিত সীমা মেইন্টেইন করে এটাকে কম্প্লাই করতে হয়। এখানে যদি ব্যত্যয় ঘটে বাংলাদেশ ব্যাংক জরিমানাও করে। এই বিষয়টা নজরে নেয়া দরকার।
শেয়ারবাজারে লেনদেনযোগ্য বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণেও বাধা তৈরি করছে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ সীমা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বন্ড ইস্যু করা যাবে কিন্তু বন্ড ট্রেইড করা যাবে না। কারণ ট্রেইড করতে গেলে ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলো যদি এখানে ইনভেস্ট করে তাহলে ওটা ক্যাপিটাল মার্কেটে লিমিটের মধ্যে চলে আসে। তখন তারা আর ইনভেস্ট করতে পারেনা। সুতরাং লিমিট থাকাতে বন্ড মার্কেটকে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী এক্সপান্ড করতে পারছিনা। কারণ যারা বন্ড কিনবে তারা তো সারা জীবন এটা নিয়ে বসে থাকবেনা। তারা মাঝখানে একটা এক্সিট প্ল্যান খুঁজে। আর এক্সিটের একমাত্র জায়গা এক্সচেঞ্জ। আর যদি এক্সচেঞ্জ ট্রেইডই করা না যায় তাহলে কেউ আর বন্ড কিনবেনা।
পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার বাইরে রাখা হয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক