আন্তর্জাতিক বাজারে দুই সপ্তাহের সর্বোচ্চে উঠেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গতকাল সর্বশেষ কার্যদিবসে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য বৃদ্ধি পায়। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র করোনা জনিত সব ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। ফলে বেড়েছে চাহিদা। একই সঙ্গে মহামারীর প্রভাব শিথিল হতে থাকায় সামগ্রিক চাহিদা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। কিন্তু জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ সে অনুপাতে বাড়েনি। এ কারণেই অব্যাহতভাবে বাড়ছে দাম।
বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির দিক থেকে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে সব ধরনের জ্বালানি পণ্য। চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্যহীনতাকেই এজন্য দায়ী করা হচ্ছে। তীব্র সংকটের মধ্যেই সম্প্রতি কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছিল মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ)। শর্ট টার্ম এনার্জি আউটলুক (এসটিইও) শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গ্যাসোলিনের খুচরা দাম কমে আসবে। কিন্তু বাজারে দেখা গেছে এর বিপরীত চিত্র। ইআইএর পূর্বাভাসের পরই বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। ফলে গ্যাসোলিনের দামও কমার পরিবর্তে বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মূল্য নিয়ন্ত্রণে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের মিত্র সংগঠন ওপেক প্লাসের প্রতি চাহিদার অনুপাতে উত্তোলন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু জোটটি এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সীমিত হারে উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। বিষয়টি জ্বালানি পণ্যের বাজারকে আরো উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে ঊর্ধ্বমুখী দামে লাগাম টেনে ধরতে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুদ উন্মুক্ত করার কথা জানিয়েছিল জো বাইডেন প্রশাসন। এসটিইও প্রতিবেদনে দেয়া মূল্য পূর্বাভাসের ভিত্তিতেই মজুদ উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এসটিইও প্রতিবেদনে নতুন করে দাম বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়, তাহলে বাইডেন প্রশাসন ব্যাপক পরিমাণ মজুদ উন্মুক্ত করবে। এতে দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য বলছে, সর্বশেষ কার্যদিবসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ১ দশমিক ৬ শতাংশ বা ১ ডলার ৩৫ সেন্ট বেড়েছে। প্রতি ব্যারেল লেনদেন হয়েছে ৮৪ ডলার ৭৮ সেন্টে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ বা ২ ডলার ২২ সেন্ট বেড়েছে। প্রতি ব্যারেল লেনদেন হয়েছে ৮৪ ডলার ১৫ সেন্টে। ২৬ অক্টোবরের পর দুই বাজার আদর্শের দামই সর্বোচ্চে উঠেছে।
চলতি বছর ব্রেন্টের দাম ৬০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ২৫ অক্টোবর এ বাজার আদর্শের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৬ ডলার ৭০ সেন্টে পৌঁছেছিল, যা তিন বছরের সর্বোচ্চ। ওপেক প্লাসের সীমিত সরবরাহের বিপরীতে চাহিদার উল্লম্ফনই দামকে আকাশছোঁয়া করে তোলে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি ব্রিটিশ বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি বিপি জানিয়েছিল, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১০ কোটি ব্যারেলে। কিন্তু সে অনুপাতে বাজারে সরবরাহ নেই। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে ওপেক প্লাস প্রতি মাসে চার লাখ ব্যারেল করে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট এটিকে বৈশ্বিক সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না। তার প্রশাসন জোটটিকে সরবরাহ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়েছে। এ নিয়ে টানা তিন সপ্তাহের মতো মজুদ বাড়ল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বিষয়টি ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আনন্দবাজার/শহক