গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশেও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। নতুন করে ভরিতে স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪১ টাকা বাড়ানো হবে।
বাজুস সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ১৭৫ টাকা বাড়ানো হবে। এতে ভরিতে স্বর্ণের দাম বাড়বে ২ হাজার ৪১ টাকা। আগামীকাল (রোববার) থেকেই নতুন দাম কার্যকর হতে পারে।
এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ঈদের আগে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। গত ১০ মে ভরিতে স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়ায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। এখন নতুন করে দাম বাড়ানো হলে চলতি মাসে স্বর্ণের দাম দুই দফায় বাড়বে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে তিন দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ভরিতে সাড়ে ৫ হাজার টাকার ওপরে কমানো হয়।
গত ১০ মে দাম বাড়ার মাধ্যমে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৭১ হাজার ৪৪৩ টাকা, ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৮ হাজার ২৯৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৫৯ হাজার ৫৪৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৪৯ হাজার ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে এই দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
বাজুস যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, সে সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮৩৪ ডলার। গত দুই সপ্তাহ তা দফায় দফায় বেড়ে এখন ১ হাজার ৮৮১ ডলারে উঠেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ার পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ৫০ ডলার বেড়ে গেছে।
বাজুসের এক সদস্য বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অনেক বেড়েছে। বাজুস চাইলে ঈদের আগেই ভরিতে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারতো। তবে দাম বাড়ানো হয়েছে আড়াই হাজার টাকারও কম। মূলত মানুষ স্বর্ণালংঙ্কার কেনার থেকে বিক্রি বেশি করায় দাম কম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাবাজারে যে হারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে, তাতে স্বাভাবিক নিয়মেই শিগগিরই বাংলাদেশে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা বাংলাদশের বাজারের ওপর নির্ভর করে না। বিশ্ববাজারের গতি-প্রকৃতির ওপরই স্বর্ণের দাম নির্ভর করে। বিশ্ববাজারে যদি স্বর্ণের দাম বাড়ে, তাহলে দেশের বাজারে বিক্রি না থাকলেও দাম বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শিগগিরই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়াবো। কারণ বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অনেক বেড়েছে। এখন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
স্বর্ণের দাম ভরিতে কী পরিমাণ বাড়তে পারে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করে এটা ঠিক করবো। তবে আপনি ধরে নিতে পারেন ভরিতে আনুমানিক দুই হাজার টাকার মতো বাড়তে পারে।
অন্যদিকে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে, আবার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ব্যাগেজ রুলে স্বর্ণ আসছে না। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারির পতনের ধারা মার্চ মাসের শুরুতেও দেখা যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে বড় পতন হওয়ায় মার্চ মাসে দু’দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। এর মধ্যে ১০ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম কমানো হয় ২ হাজার ৪১ টাকা। তার আগে ৩ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা কমানো হয়।
এছাড়া ১৩ জানুয়ারি ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৮৩ টাকা কমানো হয়। সে হিসেবে চলতি বছরে তিন ধাপে দেশের বাজারে ভরিতে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৫৪০ টাকা কমানোর পর গত ১০ মে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়ানো হয়।
স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে রূপার দামও। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রূপার দাম বেড়েছে দশমিক ৪৫ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স রূপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৫৩ ডলার। তবে আরেক দামি ধাতু প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহে এই ধাতুটির দাম কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৬ দশমিক ৫০ ডলারে।
আনন্দবাজার/শহক