ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণ পরিশোধে ফের ছাড় দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

করোনার জন্য দেয়া সুবিধা নিয়ে, গেল বছর যেসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ এবং নবায়ন হয়নি শুধুমাত্র সেই সব ঋণের ক্ষেত্রেই নতুন এই সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর অভিঘাত মোকাবেলায় ঋণ পরিশোধে আবারও সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার গণহারে না দিয়ে ঋণের ধরণ ভেদে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে।

ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল এর ক্ষেত্রে নিয়মিত সুদ পরিশোধ করলে জুন ২০২২ পর্যন্ত খেলাপিমুক্ত থাকতে পারবেন গ্রাহক। অন্যদিকে ডিমান্ড লোন পরিশোধে সময় পাওয়া যাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ।

এছাড়া মেয়াদী বা টার্ম লোন এর ক্ষেত্রে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধের সুযোগ পাবেন গ্রাহক। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতেই টার্ম লোনের এই সুবিধা পাওয়া যাবে।

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি)।

সার্কুলারে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে করোনার এর দ্বিতীয় ঢেউ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব বাড়ায় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় নতুনভাবে করোনার এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা এবং ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রবাহ স্বাভাবিক করতে এই সুযোগ দেয়া হয়েছে।

করোনার জন্য দেয়া সুবিধা নিয়ে, গেল বছর যেসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ এবং নবায়ন হয়নি শুধুমাত্র সেই সব ঋণের ক্ষেত্রেই নতুন এই সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়।

সার্কুলারে বলা হয়, যেসব চলমান ঋণের (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) মেয়াদ শেষ হয়েছে কিন্তু নবায়ন করা হয়নি, সে সব ঋণের বিপরীতে গেল বছর যে সুদ আরোপ হয়েছিল তা অনাদয়ী হলে মার্চ ২০২১ হতে জুন ২০২২ এর মধ্যে ৬টি সমান ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ওই সুদ পরিশোধ করা যাবে।

এর পাশাপাশি ওই চলমান ঋণের ক্ষেত্রে জুন ২০২২ পরযন্ত যে সুদ হবে তা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নিয়মিত পরিশোধ করতেও ৩০ জুন ২০২২ তারিখ পরযন্ত সময় পাওয়া যাবে। এতে এই ধরনের ঋণ ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত খেলাপি হবে না।

অন্যদিকে তলবি ঋণ (ডিমান্ড লোন) এর কোন মেয়াদ না থাকায় এই ঋণ পরিশোধে মার্চ ২০২১ হতে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গেল বছরের তলবি ঋণ ৮টি সমান ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ডিসেম্বর ২০২২ এর মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রেও ওই সময় (ডিসেম্বর ২০২২) পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণ বা খেলাপি করা যাবে না।

এই দুই ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে, কোন গ্রাহক যদি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে সময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে পারবে না ওই সময় থেকেই তিনি খেলাপি হয়ে যাবেন।

এদিকে মেয়াদী ঋণের কিস্তি চলতি ৩১ মার্চের মধ্যে পরিশোধের সময়সীমা থাকলেও এটি আরো তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে ৩০ জুন পর্যন্ত খেলাপি হবেন না গ্রাহক।

গেল বছরে জুড়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা জানুয়ারি থেকে বাতিল হলেও মেয়াদী ঋণ পরিশোধে আরো দুই বছর সময় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারে অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রেও সুবিধা দেয়া হলো। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে অবশ্য গেল বছরের মত গণসুবিধা দেয়ার দাবি উঠে আসছে।

নতুন সুবিধা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, সাবেক ব্যাংকার আনিস এ. খান  বলেন, ‘এই সুবিধা সময়োপযুগী। ইউরোপ, আমেরিকাসহ যেভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবার শুরু হয়েছে তাতে এই সুবিধার প্রয়োজন ছিল’।

দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ অবস্থার দিকে যাওয়ায় নতুন সুবিধা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কে ভিত্তিতে যে সুবিধা দেয়া হয়েছে তা যথার্থ।

গেল বছর জুড়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা দেয়ায় ঋণ শ্রেণিকরণ বন্ধ ছিল। তাতে কাগজে কলমে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছিল। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮,৭৭৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ‍ঋণের ৭.৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৯ সাল শেষে এটি ছিল যথাক্রমে ৯৪,৩৩১ কোটি টাকা ও ৯.৩২ শতাংশ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন