ঢাকা | শুক্রবার
৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাম বাড়ছে সিমেন্টের

করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে অবকাঠামো খাতের সুদিন ফিরতে শুরু করলেও সংশ্লিষ্টদের ‘মাথাব্যথার’ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিমেন্ট সংকট। এরই মধ্যে পণ্যটির দামও বাড়তে শুরু করেছে। সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের জন্য একাধিক কারণের কথা বলছেন পণ্যটির উৎপাদনকারীরা।

তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম অনেক বেড়েছে। ক্লিংকার বানানোর জন্য যে কয়লা প্রয়োজন হয়, দাম বেড়েছে সেটিরও। পাশাপাশি ক্লিংকারের পরিবহন খরচও বেড়েছে। যেখানে আগে একটি জাহাজের দিনপ্রতি ভাড়া ৮-১০ হাজার ডলারের মধ্যে ছিল, তা বেড়ে বর্তমানে ৩৫-৩৬ হাজার হয়েছে। এসব কারণে একদিকে সিমেন্টের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে সরবরাহ সংকটও দেখা দিয়েছে। আবার দেশে সিমেন্টের চাহিদাও এখন বাড়তির দিকে। এ বাড়তি চাহিদার কারণেই সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে উঠেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার নিশ্চলতা কাটিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের সিমেন্ট উৎপাদন খাত। এর ফলে উৎপাদনও বেড়েছে। তবে উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে দেশের বাজারে এখন নির্মাণপণ্যটির দামও বাড়তির দিকে। কোম্পানিভেদে স্বাভাবিক সময়ে সিমেন্টের দাম থাকে ৪০০-৪২০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৪৭০ টাকায়। বাজারে এখন প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৪০-৫০ টাকা বেশিতে।

সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা বলছেন, মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর দেশে নির্মাণকাজ ছিল না বললেই চলে। এখন এর গতি অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে ক্লিংকার তৈরিতে অপরিহার্য পণ্য কয়লার দামও এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিশ্বের প্রায় সব দেশের অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। ওই দেশগুলোয় টিকা গ্রহণ শুরুর পর বর্তমানে মানুষের আত্মবিশ্বাস ও সাহস ফিরে আসছে। এ প্রেক্ষাপটে এখন গোটা বিশ্বে খুব দ্রুততার সঙ্গে অসম্পূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে সিমেন্টের চাহিদায়।

অব্যাহত দর বৃদ্ধি তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে উৎপাদনকারীদের আরো কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ কারণে বর্তমানে চাহিদা বাড়লেও সিমেন্টের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদনকারীদের ক্ষতিই দেখতে পাচ্ছে বিসিএমএ। সংগঠনটি মনে করছে, অব্যাহত দর বৃদ্ধি সিমেন্ট নির্মাতাদের অনেক বড় অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। গতকালও গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে সংগঠনটি।

এতে বলা হয়েছে, একদিকে এক বছর ধরে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব, অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের অস্বাভাবিক ও অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের সিমেন্ট খাতে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের সিমেন্ট খাতের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখন আর অনুমান করা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহূত মৌলিক কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে নির্ধারিত শুল্ক প্রতি টন ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছে বিসিএমএ।

সিমেন্টের অব্যাহত দর বৃদ্ধি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদেরও। বাড়তি দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী সিমেন্ট পাচ্ছেন না তারা। ঠিকাদার ও নির্মাতারা বলছেন, সিমেন্ট সংকটের কারণে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকালও পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন