ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষিকার্ডের মাধ্যমে ঋণ দেয়ার চিন্তা করছে সরকার

কৃষকদের কৃষিঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে জামানতের পরিবর্তে কৃষিকার্ড বা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের প্রত্যয়নপত্র আমলে নেয়ার চিন্তা করছে সরকার। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি নিয়ে সভায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে কৃষিকার্ড বা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে কৃষিঋণ দেয়ার বিষয়ে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এতে বলা হয়, কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সহায়তা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেই বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকের কাছে ঋণ সুবিধা কীভাব আরও বেশি করে পৌঁছে দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয় সভায়।

প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে ডিএই, বিএডিসি ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মসূচি বা প্রকল্পের আওতায় যেসব ‘কৃষক গ্রুপ’ রয়েছে- তাদের সঙ্গে ব্যাংকের সংযোগ বৃদ্ধি; মাঠ দিবস উদযাপন ও কৃষক প্রশিক্ষণের মডিউলে কৃষিঋণকে অন্তর্ভুক্ত করা ও স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণে আমন্ত্রণ; দেশে কৃষিঋণের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণে সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়।

এছাড়া, কৃষিঋণ বিতরণের পরিসংখ্যানকে ঢেলে সাজিয়ে এর সঙ্গে শস্য, কৃষকশ্রেণি ও অঞ্চলভিত্তিক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কৃষিঋণ বিতরণের পরিসংখ্যান প্রণয়নের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয় সভায়।

সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘কৃষকের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণসুবিধা সহজ করতে পারলে তাদের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে কৃষির পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে। এতে দেশ উপকৃত হবে।’

সভায় জানানো হয়, দেশে ক্রমশ কৃষিঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০১ সালে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ২০ কোটি টাকা, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর দেয়া মোট ঋণের অনুপাতে কৃষিঋণের পরিমাণ কমেছে। ২০০১ সালে মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছিল কৃষিঋণ, যা কমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এতে আরও জানানো হয়, কৃষকেরা কতটুক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ পান সেই বিষয়েও ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। বিবিএসের হিসাব মতে, ২৬ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইপ্রি) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ সুবিধা পান। এছাড়া, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ১৯ শতাংশ, এনজিওর নিকট থেকে ৩৬ শতাংশ ও মানি লেন্ডারের নিকট থেকে ১২ শতাংশ ঋণ পেয়ে থাকেন। আবার কৃষিব্যাংকগুলো যেসব কৃষকদের ঋণ দেন তার মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ২০ শতাংশ রয়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও ১৫ শতাংশ বৃহৎ কৃষক।

সভায় আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলমান অর্থবছরে গত জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার কৃষিঋণের মধ্যে ১৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৫১৪ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন