বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে চতুর্থ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক থেকে খুব বেশি অগ্রগতি না হলেও ভবিষ্যতে আশার জায়গা তৈরি হবে বলে মনে করেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ শহীদুল হক। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গারা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাটিকে বিবেচনা করছে এবং এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়াটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
গেল মঙ্গলবারের (১৯ জানুয়ারি) ওই বৈঠক বিশ্লেষণ করে শহীদুল হক জানান, ‘বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের স্বার্থের জায়গা ভিন্ন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এই তিনটি পক্ষের উদ্দেশ্য ভিন্ন এবং তাদের লক্ষ্য কখনো এক নয়। এই তিন পক্ষের মাঝখানে রয়েছেন রোহিঙ্গারা এবং তাদেরও লক্ষ্য ও স্বার্থ একদম বিপরীত। এই অবস্থায় খুব বেশি প্রচেষ্টার জায়গা থাকে না।’
চীনের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক সম্পর্কে তিনি জানান, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চীনের কাছে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং সম্পদ বিবেচনা করা হয়, সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের অবস্থান বেশি ভালো এবং এটি মেনে নিতে হবে ভূ-রাজনীতিতে চীনের কাছে বাংলাদেশের থেকে মিয়ানমারের গুরুত্ব বেশি।’
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট
গত এক বছরের ব্যবধানে বৈশ্বিক ও এশিয়ার ভূ-রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রোহিঙ্গা সমস্যার ওপর।
শহীদুল হক জানান, ‘এই এক বছরে আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে গণহত্যা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি পরিচয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই রায়ের কারণে মিয়ানমার ও অন্যরা চাপে আছে। কারণ, গণহত্যা হয়েছে এটি প্রমাণিত হলে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে অনেক দেশের সমস্যা হবে।’
এদিকে, অতিমারি, অর্থনীতিতে মন্দাভাব এবং ট্রাম্পের নীতির কারণে ২০২০ এ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে এবং সেখানে চীন শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন—মানবাধিকারের বিষয়গুলো, যা নিয়ে আগে যুক্তরাষ্ট্র তেমনভাবে বলেনি, এখন তা বলা শুরু করবে বলে মনে করেন শহীদুল হক।
তিনি জানান, ‘এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চীন ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুটি কীভাবে দেখে তার ওপর নির্ভর করবে সমাধান।’
চীন বনাম ভারত
ভারত ও চীনের সাথে বাংলাদেশ একটি ভারসাম্য সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে ওই দুই দেশের কাছ থেকে প্রায় একই ধরনের ব্যবহার পেয়েছে বাংলাদেশ।
শহীদুল হক জানান, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এই দুই দেশের অবস্থান খুব কাছাকাছি। ওই জায়গায় পরিবর্তন আসবে কিনা এটি দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটি মনে রাখতে হবে, চীনের কারণে ভারতের অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলে গত তিন বছরে সেটি পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু, যেহেতু সেটা হয়নি, আমার মনে হয় না এটি নিকট ভবিষ্যতে হবে।’
এছাড়া সব রোহিঙ্গার ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সব রোহিঙ্গার ফেরত যাওয়া সম্ভব এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান থাকতে হবে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের সবাইকে ফেরত যেতে হবে। জাতিসংঘ একটি সংস্থা নির্ধারণ করেছে তারা কোথা থেকে এসেছে এবং তাদের কোথায় ফেরত যাওয়ার কথা। জাতিসংঘের এই তালিকা মিয়ানমার জোর করে প্রত্যাখ্যান করতে পারে, কিন্তু বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বাতিল করার সুযোগ নেই।’
আনন্দবাজার/শাহী