ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা থামছেই না। দাম কমার চেয়ে বরং প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। তবে বাজার ভেদে কোথাও কোথাও ১৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

আজ সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। তবে বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ থাকলেও সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যে আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল তা সপ্তাহের ব্যবধানে আজ ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দামে।

হিলি থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গতকাল সেখানে পাইকারি বাজারে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ১১০-১১৫ টাকা কেজি দরে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যটির দাম জোয়ারের পানির মতো করে বাড়তে থাকে।

টিসিবি সূত্র অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭২-১০৫ টাকা কেজি। আমদানি করা এ পণ্য বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা। এরপর এক দিন বা দুই দিন পর পর কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা করে বাড়তে থাকে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সূত্র অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ টাকা আর আমদানি করাটা বিক্রি হয়েছিল ৩২ টাকা কেজি দরে।

গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতীয়, মিসরীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

একজন ক্রেতা বলেন, ‘এ যেন দুঃস্বপ্নের দেশে আছি। পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা। চিন্তা করতে পারছেন! ডিম ভাজি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই পেঁয়াজের ব্যবহার। স্বল্প আয়ের মানুষ কীভাবে বাঁচবে? ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনলে এখন কারো হাতে ওইদিনের বাজারের পয়সা থাকে না। বাধ্য হয়ে চাষের মাছ বা ব্রয়লার মুরগি নিয়ে যেতে হয়। কয়েক মাস ধরেই পণ্যটির বাজারে অস্থিরতা চলছে, তার পরও এর কোনো মনিটরিং নেই?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আড়তের এক বিক্রেতা জানান, দেশে পেঁয়াজের অভাব নেই। দাম বাড়তে পারে এমন তথ্য অনেক ব্যবসায়ীর কাছে ছিল। তারা পেঁয়াজের কৃত্রিম দাম বাড়িয়েছেন। সামনে আরো দাম বাড়ার তথ্য রয়েছে বলে জানান ওই আড়তদার।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি, দেশি হাইব্রিড ১৩৫-১৪০, মিসরীয় ১৩০, পাকিস্তানি ১৪০ টাকাসহ বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, দেশে পেঁয়াজের সংকট কোথায়, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা তার চাহিদামতোই পণ্যটি কিনতে পারছেন। এমন তো হচ্ছে না, বাজারে পেঁয়াজই নেই! তবে কেন দাম এত চড়া?

ভারত থেকে রফতানি বন্ধের অজুহাত কাজে লাগিয়ে একটি মহল সুপরিকল্পিত কারসাজি করে পণ্যটির দাম বাড়িয়েছে। তারা ‘সংকটের’ কথা বলে ইতোমধ্যে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এত কিছুর পরও সংশ্লিষ্ট বাজার তদারকি সংস্থা দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।

 

আনন্দবাজার/ইউএসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন