ঢাকা | বুধবার
২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের লুঙ্গিতে ভারতের রমরমা ব্যবসা

বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের তাঁতিদের তৈরি করা লুঙ্গির সুনাম। প্রতি বছর আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ২০টি দেশে প্রায় দেড় কোটি পিস লুঙ্গি রফতানি হচ্ছে দেশ থেকে। ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা মূল্যের ৮৫ লাখ পিস লুঙ্গি কিনছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।

তবে দেশের লুঙ্গিতে নামীদামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগিয়ে ভারতের লুঙ্গি হিসেবে বিশ্ববাজারে রফতানি করে ভারত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় দেড় কোটি লোক বিদেশে কাজ করছেন। তাদের চাহিদা মেটাতে ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২০টি দেশে লুঙ্গি রফতানি করা হচ্ছে। বাঙালিরাই সাধারণত এই লুঙ্গির ক্রেতা। তবে ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশের মানুষ শখ করে বাংলাদেশী লুঙ্গি কেনেন।

ভারতের অধিকাংশ ব্যবসায়ী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরহাট এবং টাঙ্গাইলের করটিয়াহাট থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ পিস লুঙ্গি কিনে নিয়ে নামীদামি শপিংমল, বিপণিবিতান ও ছোট-বড় পাইকার এবং রফতানিকারকদের কাছে বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা করছেন।

সিরাজগঞ্জ ও পাবনা তাঁতি সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, পাবনা জেলার হাতিগাড়া, বনগ্রাম, সান্যালপাড়া, ছেঁচানিয়া, দোগাছি, সুজানগর, ডেমরা, রাকশা, ঢহরজানি, কুলোনিয়া, সোনাতলা, পুন্ডুরিয়া, বিলসলঙ্গী, চাঁচকিয়া, পেঁচাকোলা, ঈশ্বরদী, জালালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার পুকুরপাড়, নগরডালা, ডায়া, খুকনী, শিবপুর গাছপাড়া ও নরসিংদী জেলার চরসুবুদ্ধি, টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইল, এলাসিন, বাতুলি, বাজিদপুরসহ তাঁত প্রধান এলাকার তৈরি লুঙ্গির সুনাম ও কদর বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

তাঁতিরা জানান, বর্তমানে লুঙ্গি পরিচিতি পাচ্ছে কারখানার নিজস্ব ব্র্যান্ডে। দেশে প্রথম লুঙ্গি ব্র্যান্ডিং শুরু করে নরসিংদীর হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স। বাজারে সোনার বাংলা টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড, পাকিজা, এটিএম, বোখারী, ফজর আলী ও রংধনুসহ প্রায় ১২৫ ব্র্যান্ডের লুঙ্গি দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাঁত কারখানায় ৪০-১০০ কাউন্টের সুতার লুঙ্গি তৈরি হচ্ছে। এসকল লুঙ্গি মানভেদে প্রতি পিস ২২০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাহজাদপুর হাটের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল্লা আল মাসুদ বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, টাঙ্গাইলের করটিয়াহাট থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাপড় কিনেন। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে সোনার বাংলা টেক্সটাইল লুঙ্গি। প্রতি বছর দেশ থেকে গড়ে ৭০-৭৫ কোটি টাকার লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ লুঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার্স, এক্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েসন ও আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল মিয়া জানান, গেল বছর তার প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েকটি দেশে লুঙ্গি রফতানি করেছে। প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে রফতানির পরিমাণ। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের লুঙ্গির মান সবচেয়ে ভালো। তাই সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের লুঙ্গি নিয়ে ভারত যে ব্যবসা করছে সেই ব্যবসা আমরাও করতে পারব। এতে দেশ প্রচুর বৈদেশী মুদ্রা আয় হবে এবং তৈরি পোশাকের পর লুঙ্গি দিয়েই বিশ্ববাজারে নতুন স্থান করে নেওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন