করোনায় মানুষের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না আয়। পরিস্থিতি সামলাতে জমানো সঞ্চয়ও ভেঙে ফেলতে হচ্ছে অনেককে। তবে এর মধ্যেও ব্যাংকে বা নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমাচ্ছেন অনেকেই। তবে আগে মানুষ আমানত রাখার ক্ষেত্রে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেশি সুদ দেয় সেই খোঁজ নিতো।
কিন্তু বর্তমানে বেশি সুদের চেয়ে কম সুদের প্রতিষ্ঠানগুলোকেই পছন্দের তালিকায় রাখছেন আমানতকারীরা। নানা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে- যেসব ব্যাংকে সুদের হার কম, সেসব ব্যাংকে আমানত অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের চেয়ে সুদের হার বেশি হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর জানান, এখন আমানতকারীরা বেশি লাভের আশায় ঝুকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে মূল টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না অনেকে। বেশি সুদে কয়েক বছর আগে পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফারমার্স ব্যাংকে) আমানত রেখে বিপদে পড়েছেন অনেকেই। পিপলস লিজিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা এখনও তাদের মূল জমানো টাকাই ফেরত পাচ্ছে না। ফলে বর্মাতমানে মানুষ এখন ভালো প্রতিষ্ঠান বাছাই করে আমানত রাখছে। এতে বেশি সুদের চেয়ে তুলনামূলক কম সুদের প্রতিষ্ঠানেই আস্থা রাখছেন আমানতকারীরা।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১ এপ্রিল থেকে আমানতে ৬ শতাংশ সুদহারের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই সীমা অমান্য করে যেসব ব্যাংক বেশি সুদে আমানতের অফার দিচ্ছে, সেই ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে মানুষ যেতে চাইছে না। তবে যেসকল ব্যাংকে সুশাসনের পাশাপাশি অনিয়ম-দুনীতি কম, সেসব ব্যাংকে বৃদ্ধি পেয়েছে আমানত প্রবৃদ্ধি। করোনাকালে আমানত প্রবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক।
আমানত প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ হলেও টাকার পরিমাণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের। এ বছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকটির আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ ও এজেন্ট ব্যাংকিং ইসলামী ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধির বড় কারণ বলে মনে করছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
এই বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা ব্যাংক ফেরত না পেলে ওই ব্যাংকে আমানত ফেরত পাওয়া নিয়েও ভয় থাকে। এই কারণে ভালো ব্যাংক দেখে কম সুদেই আমানত রাখছেন গ্রাহকরা। আবার কস্ট অব ফান্ড কমানোর স্বার্থেই অনেক ব্যাংক উচ্চসুদের স্থায়ী আমানত ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে তাদের আমানত অনেক কমে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, বেসিক, সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল-এর সুদহার ৫ দশমিক ৫০ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত। অবশ্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ দিচ্ছে আমানতকারীদের। ব্যাংকটি ৩ মাস থেকে এক বছরের কম সময়ের সুদ ৪ দশমিক ৫০ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে তিন বছর বা তার বেশি সময়ের সুদহার ৬ থেকে ৯ শতাংশ।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে