ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্লথগতির প্রবৃদ্ধির পথে বিশ্ব অর্থনীতি

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গতির প্রবৃদ্ধি করতে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি, জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির মতে, ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রমের শ্লথগতি ও বাড়তে থাকা বাণিজ্য এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমাতে মূল ভূমিকা রাখছে।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ-এর কর্ণধার ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ধীরগতির সম্ভাবনা বিশ্বের ৯০ শতাংশ এলাকাতেই। প্রায় থমকে গিয়েছে বাণিজ্য।

তিনি আরো  বলেন, আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ, চীন— আর্থিক কর্মকাণ্ড কমছে প্রায় সর্বত্র। বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ভারত ও ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশে।

বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি নিজেদের সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস করেছে যে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ। এপ্রিলের পূর্বাভাসে ৩ দশমিক ৩ শতাংশের কথা জানিয়েছিল আইএমএফ। এবার নিয়ে পাঁচবার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল সংস্থাটি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, ২০০৮-০৯ বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর চলতি বছর সবচেয়ে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২০ সালের জন্যও প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ। এপ্রিলে ৩ দশমিক ৬ শতাংশের কথা বললেও আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে এবার জানিয়েছে তারা।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেন, পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখেই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়েছে এবং বাণিজ্য বাধা বৃদ্ধির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে প্রবৃদ্ধির দুর্বল হয়ে পড়ে।

আইএমএফের হিসাব অনুসারে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০২০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক জিডিপি কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

আইএমএফ আরো বলছে, কয়েকটি উন্নত অর্থনীতিতে যদি অতি শিথিল মুদ্রানীতি গ্রহণ করা না হয়, তবে চলতি ও আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট।

তবে সংস্থাটি এও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দীর্ঘ সময় ধরে নিম্ন সুদহার ধরে রাখলে তা বড় ধরনের আর্থিক সংকট তৈরি করতে পারে।

গোপীনাথ বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ঝুঁকির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশগুলোকে নীতি পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নীতিসংক্রান্ত ভুলের কোনো জায়গা নেই এবং বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে হবে।

আইএমএফ বলছে, চলতি ও আগামী বছর উন্নত অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আর উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি চলতি বছর হবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

চলতি ও আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ২ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস করেছে আইএমএফ। অন্যদিকে সংস্থাটির এবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং আগামী বছর কিছুটা বেড়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ৪ শতাংশে।

আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, চীনের প্রবৃদ্ধি চলতি ও আগামী বছর হবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এ পূর্বাভাস মিলে গেলে তা হবে ১৯৯০ সালের পর চীনের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।

ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে আইএমএফ। দেশটির চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের থেকে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমিয়ে করেছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ২০২০ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে বলে সংস্থাটি মনে করছে। অন্যদিকে ২০২০ সালে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানির প্রবৃদ্ধি চলতি বছর হবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং আগামী বছর বেড়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ২ শতাংশে। ব্রেক্সিটসংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তায় ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ।

আগামী বছর জাপানের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের ১ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে আগামী বছর হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছর সৌদি আরবের প্রবৃদ্ধি হতে পারে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এবং আগামী বছর ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

 

আনন্দবাজার/খলিফা

সংবাদটি শেয়ার করুন