ভেতর থেকে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক বিবেচনায় সারা পৃথিবীকে পেছনে ফেলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই এগিয়ে চলার সঙ্গে দেশের মানুষের রুচিরও পরিবর্তন এসেছে। ধনী শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি মধ্য আয়ের অনেকে বিভিন্ন দেশের উন্নত ব্র্যান্ডের নানা ধরনের পণ্য ব্যবহার করছেন। তবে আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য আসছে কম। এ কারণে বিদেশি পণ্য কিনতে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন বাজার করতে। এতে একদিকে দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে, অন্যদিকে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি পণ্য যাতে সহজে দেশের বাজারে আসতে পারে, সেজন্য আমদানি শুল্ক কমানোর কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নিজেদের সামর্থ্য বাড়াতে হবে। শুধু তাই নয়, তারা মনে করছেন, বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশীয় পণ্যগুলোকে আলাদাভাবে কোনও প্রটেকশন দেওয়া বা সুরক্ষা দেওয়ার দরকার নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা গত এক দশকে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।’ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সামর্থ্য বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, বিদেশি পণ্য আমদানিতে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্কারোপ করে রেখেছে বাংলাদেশ। যা চীন ও ভারতের চেয়ে তিন গুণ বেশি। যার ফলে বিশ্বের নামি-দামি ও বড় বড় ব্র্যান্ড ঢাকায় আসতে পারছে না। যে কারণে অনেকে অবৈধ পথে ব্র্যান্ডের পণ্য আনছেন।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগের চেয়ে ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বেড়েছে। আরও বাড়বে। ফলে বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্কারোপ কমানো উচিত।’ তিনি মনে করেন, একদিকে বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া দরকার। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা যে ভ্যাট সরকারকে দেয়, তা যেন পুরোটা সরকার পায়, তারও নিশ্চয়তা বিধান করা। এজন্য ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানো জরুরি।
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া দরকার। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে আমাদের বের হতে হবে। সেক্ষেত্রে এমনিতেই অতিরিক্ত শুল্কারোপ থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। তাছাড়া দেশের মানুষের রুচি বদলেছে। শুল্ক তুলে দেওয়া হলে পৃথিবীর সব বড় বড় ব্র্যান্ড চলে আসবে। দেশের নিত্যব্যবহার্য পণ্যের বাজারে দেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। আর আমদানি হওয়া এসব পণ্যের বিক্রি বেড়ে গেলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।
আনন্দবাজার/শহক