দিনের পর দিন বিদ্যুৎ অফিসের ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সেই সাথে তাদের মনগড়া বিলের মাশুল দিতে হয়েছে গ্রাহকদের।
ফলে বিদ্যুৎ অফিসের এই ‘ভূত’ এর খোঁজ করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। সম্প্রতি ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই ‘ভূত’-এর খোঁজ।
ওই প্রতিবেদন হতে জানা গেছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা না করেই নিজ সিদ্ধান্তে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছিলেন ছিলেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির (ডিপিডিসি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নির্দেশদাতা এই কর্তাব্যক্তি হচ্ছে ডিপিডিসির আইসিটি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রবিউল হাসান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার রসিকতার সুরে বলেন, ‘ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের ভূত খুঁজে পেয়েছি। আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। সেই সাথে এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসছে।
ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে জিএম রবিউল হাসানসহ ডিপিডিসির আরও শীর্ষ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি দুজন হলেন নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন অর রশিদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী (আইসিটি অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) এস এম শহীদুল।
সম্প্রতি শেষ হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয় অধিশাখা-২-এর উপসচিব আইরিন পারভীন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলেন। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে তদন্তকারী দলের ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরি সম্পর্কিত ই-মেইল পাঠানোয় ডিপিডিসি তথা বিদ্যুৎ বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য রবিউল হাসানকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, ডিপিডিসির দুই কর্মকর্তা গণমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী দায়িত্বহীন বক্তব্য দেওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই কারণে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন অর রশীদ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহীদুলের বিরুদ্ধে পরিচালনা পরিষদ ব্যবস্থা নিতে পারে। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে অতিরিক্ত বিল পরিহার করার লক্ষ্যে কম্পানির আইসিটি ও এনওসিএসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে আরও দক্ষ ও কার্যক্ষম করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণের সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া খুব দ্রুত সময়ে ডিপিডিসির সকল গ্রাহকের জন্য স্মার্ট প্রি-মিটারিং কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ গ্রাহকদের যেকোনো অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সমাধানের জন্য এনওসিএসগুলোকে আদেশ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, এসব ঘটনার রোধে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে যত্নশীল হতে হবে। এ ছাড়া ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য লিডারশিপ ও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এই ব্যাপারে মহাপরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের আদেশ বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে আর ভূতুড়ে বিলের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে সেগুলোও বন্ধ হবে।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে