শতবছরের পুরনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনানদীর ভিওসি ঘাটের ধানের হাট। আর এই হাটে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ধান বেচা-কেনা হয়। সম্প্রতি হাটে ধানের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে হাটে বেচাকেনাও কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামেই ধান কিনতে হচ্ছে চালকল মালিকদের।
ব্যাপারীরা বলছেন, কৃষকদের গোলায় ধান নেই। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ হচ্ছেনা এবং এই সংকট স্থায়ী হবে আরও কয়েক মাস। এ অবস্থায় বর্ধিত সময়েও সরকারি গুদামে চুক্তি অনুযায়ী শতভাগ চাল সরবরাহ নিয়ে শঙ্কিত চালকল মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নৌপথে আশুগঞ্জের ভিওসি ঘাটে নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাড়ে তিনশ চালকলে ধানের যোগান দেয় প্রাচীন এই হাট। প্রতিদিন ভোর থেকেই ভিওসি ঘাটে একে একে ভিড়তে থাকে ধানবোঝাই ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো। এরপর সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলে ধানের বেচা-কেনা। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা হয় দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই ধানের হাটে।
গত এক মাস ধরে হাটে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা বেশি থাকলেও ধানের সরবরাহ কম। আর সরবরাহ কম থাকায় ধানের দামও বেড়ে গেছে। আগে দৈনিক প্রায় এক লাখ মণ ধান বেচা-কেনা হলেও, এখন গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার মণ ধান বেচা-কেনা হচ্ছে হাটে।
বর্তমানে হাটে বিআর-২৮ জাতের এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৩০ টাকা ও বিআর-২৯ জাতের ধান ১০৮০ থেকে ১১০০ টাকা এবং হীরা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৭০ থেকে ১০০০ টাকা মণ। তবে হাটে সংকট তৈরির আগে বিআর-২৮ জাতের প্রতিমণ ধান বিক্রি হয়েছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা ও বিআর-২৯ ধান ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং হীরা ধান প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দরে। এখন হাটে সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়েই বেশি দরে ধান কিনতে হচ্ছে চালকল মালিকদের। কারণ চুক্তি অনুাযায়ী নির্ধারিত সময়ে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ না করলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
কয়েকজন ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে তিনদিন কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনলে একটি বড় নৌকা ভরে যেত। এখন ধানের সংকটের কারণে নৌকাভর্তি করতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ দিন। কৃষকদের কাছে ধান নেই। কারণ গত মৌসুমে ফলন ভালো হলেও অনেক কৃষক তাদের সব জমিতে ধান চাষ করেননি। এর ফলে এখন ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও হাটে সরবরাহ কম। এতে করে ধানের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। হাটের এ অবস্থা আরও কয়েক মাস থাকবে।
আনন্দবাজার/শহক