প্রতি বছরই আইসক্রিম শিল্প খাতে ১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, আইসক্রিম বিক্রির হার একেবারে শূন্যে এসে ঠেকেছে। ফলে করোনার প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আইসক্রিম শিল্প। তাই বর্তমানে সরকারের সহযোগিতা না পেলে এ খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খাতটির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, আইসক্রিমের ব্যবসা হচ্ছে মৌসুমভিত্তিক। এপ্রিল, মে এবং জুন এই তিন মাস সবচেয়ে বেশি থাকে আইসক্রিমের চাহিদা। এর বাইরে আইসক্রিম বেশি বিক্রি হয় মার্চ, জুলাই এবং আগস্টে। ফেব্রুয়ারি, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এ চার মাস অফ-পিক মৌসুম থাকে। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে শীতকালে আইসক্রিম খুব একটা বিক্রি হয় না। ছোট বয়সী এবং নারী ভোক্তাদের মধ্যে আইসক্রিম বেশি জনপ্রিয়। ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, আড্ডার সময় অর্থাৎ ঘরের বাইরে থাকার সময়ে মানুষ বেশি আইসক্রিম খায়। তবে অঞ্চল হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি আইসক্রিম বিক্রি হয়।
আইসক্রিমের বাজারে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হচ্ছে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ইগলু। বিগত তিন বছর ধরেই উচ্চপ্রবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে আইসক্রিমের বাজারের ৪৭ শতাংশ ইগলুর দখলে। আইসক্রিম শিল্পে করোনার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ইগলুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিএম কামরুল হাসান জানান, করোনায় আইসক্রিম শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠান্ডাজাতীয় খাবার বিশেষ করে আইসক্রিমের খাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফলে বর্তমানে আইসক্রিমের বিক্রি ৩০ শতাংশে নেমে গেছে। আইসক্রিম ভোক্তার ৬০ শতাংশই হলো বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে এবং করোনার ভ্যাকসিন চলে এলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে আইসক্রিমের বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমি আশাবাদী।
আইসক্রিমের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্র্যান্ড পোলার। বর্তমানে পোলারের মার্কেট শেয়ার ৩৭ শতাংশ। ১৯৮৬ সাল থেকে পরবর্তী এক দশক দেশের আইসক্রিমের বাজারে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড ছিল পোলার।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে আইসক্রিম শিল্পে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এর বড় অংশই ব্যাংকঋণ। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের মধ্যে আইসক্রিম খাত না থাকায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে কাঁচামাল ও লজিস্টিকসের ওপর শুল্ক কমানোর পাশাপাশি আয়কর ছাড় চাইছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। স্বল্পমূল্যে দুধ প্রাপ্তির জন্য ডেইরি ফার্মগুলোকে ভর্তুকি দেয়া ও সুদের হার কমানোরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে