বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। আষাঢ়-শ্রাবণে এখনও দেখা মেলেনি ইলিশের। এখন ভাদ্রের মাঝ সময়েও বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় নদ-নদীতে তেমন একটা দেখা মিলছে না ইলিশের। জেলেরা নদ-নদী এবং সাগর থেকে ফিরছেন ‘খালি’ হাতে। যা-ও ইলিশ পাচ্ছেন, তা বিক্রি করে উঠছে না খরচ। অথচ এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। বাজারে ইলিশের দামও বেশ চড়া।
মূলত আবহাওয়াকেই ইলিশের আকাল অবস্থার জন্য দায়ী করছেন মৎস্যজীবীরা। তারা বলছেন, তিনটি লঘুচাপ, এর ওপরে উজানের পানির কারণে জেলেরা অন্তত ২০ দিন ছিলেন ঘরে। এখন বন্যার পানি নদী থেকে সাগরে ছুটছে। উজানের পানির স্রোত এতটাই প্রকট যে, তা অতিক্রম করে ইলিশের অভয়াশ্রমে (নদী) ফেরা প্রায় অসম্ভব। বন্যার আগে জেলেরা বারকয়েক গভীর সমুদ্রে গেলেও ইলিশের ঝাঁক সেভাবে আটকায়নি জালে।
এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত নদী তথা জলে নুনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশের উজানে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের মুখে যন্ত্রচালিত নৌকার দাপট ইলিশের ঝাঁককে ছত্রভঙ্গ করছে। মোহনার মিষ্টি জলে প্রবেশের আগেই বড় বড় ট্রলার সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই নির্বিচারে ছোট ইলিশ ধরছে। এভাবে ইলিশ কমার ব্যাপারটি উদ্বেগের।
সাগরতীরের পদ্মা গ্রামের জেলে ইউসুফ হোসেন জানান, অতি জোয়ারে বাড়িঘরে নদীর পানি ঢুকেছে। তা ছাড়া সাগরে সিগন্যাল ছিল। তাই জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পারেননি। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই জেলেরা নদীতে মাছ শিকারের জন্য গেছেন। এর আগে লঘুচাপের সময় যাঁরা সাগরে গেছেন তাঁদের বেশির ভাগই ফিরেছেন। তারা বলছেন, সাগরমুখী স্রোত অস্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে নদীতে জাল ফেলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এই স্রোতে ইলিশের দেখা মিলবে না। তাই ছোট ট্রলারগুলো নদীতে যাচ্ছে না। তবে বড় মাছ ধরা ট্রলার সাগরে ছুটছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী জানান, উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি মেঘনা হয়ে ঢুকে পড়েছে দক্ষিণের জনপদে। তা ছাড়া অমাবস্যা এবং পূর্ণিমার কারণে ভাদ্রে হালকা থেকে মাঝারি অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি নদীপথে সাগরে ছুটে চলছে। সাগরমুখী সেই পানির স্রোতের তীব্রতা কমলেই নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, বন্যার পানি আর লঘুচাপের কারণে আগস্টে ইলিশের দেখা মেলেনি। লকডাউনের পাশাপাশি প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে ছোট ইলিশ জেলেরা চলতি বছর ধরেননি।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে