করোনার প্রকোপে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে দেশের ২১.৭ শতাংশ মানুষ। সংখ্যায় যা দাঁড়ায় তিন কোটি ৫৬ লাখ। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সভায় বেসরকারি সংস্থা দুটি ‘লাইভলিহুড, কোপিং অ্যান্ড রিকভারি ডিউরিং কভিড-১৯’ শীর্ষক জরিপভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরে।
বেসরকারি সংস্থা বিআইজিডি ও পিপিআরসির জরিপ বলছে, করোনাকালে রাজধানী ছেড়ে চলে গেছে ১৫.৬৪ শতাংশ মানুষ। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচ, সন্তানের শিক্ষা খরচ এবং যোগাযোগ খরচ সামলাতে না পেরে তাঁরা ঢাকা ছেড়ে নিজ এলাকায় চলে গেছেন। শুধু ঢাকা নয়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামেরও একই চিত্র। করোনাকালে কাজ হারিয়ে চট্টগ্রাম থেকে অন্যত্র চলে গেছে ৯ শতাংশ মানুষ।
বিআইজিডি ও পিপিআরসির জরিপের তথ্য বলছে, ভাগ্য অন্বেষণে প্রতিদিন যেখানে এক হাজারের মতো লোক ঢাকায় প্রবেশ করে, সেখানে করোনাকালে ঢাকায় আসার প্রবণতা একদমই নেই। কাজের সন্ধানে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষের ঢল নেই বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও।
বিআইজিডি ও পিপিআরসি করোনাকালে আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে গবেষণা করে আসছে। সাধারণ ছুটির পরে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে সেটা নির্ণয়ের জন্য এই গবেষণাটি করা হয়। যার প্রতিবেদন গতকাল তুলে ধরেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।
গত ২০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত গবেষণা জরিপটি পরিচালনা করা হয়। জরিপে অংশ নেয় সাত হাজার ৬৩৮টি পরিবার। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি শহরের পরিবার, ৪৩ শতাংশের বেশি গ্রামের পরিবার এবং ১.২২ শতাংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবার।
জরিপে দেখা গেছে, করোনায় সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছে গৃহকর্মীরা। দেশে বর্তমানে ছয় লাখের মতো গৃহকর্মী রয়েছে। করোনাকালে ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী কাজ হারিয়েছে। এরপরই রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই পেশার ৩৫ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে এই সময়ে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অদক্ষ শ্রমিক। তাদের কাজ হারানোর হার ৩১ শতাংশ।
ড. ইমরান মতিন বলেন, করোনাকালে আয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রিকশাচালকদের। করোনার আগে একজন রিকশাচালকের দিনে যদি ১০০ টাকা আয় হতো, করোনাকালে সেটা ৪৬ টাকায় নেমে এসেছে। আয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তাদের আয় কমেছে অর্ধেক। এরপর আছে পরিবহন শ্রমিক।
দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়া তিন কোটি ৫৬ লাখ মানুষ করোনা মহামারির আগে দারিদ্র্যসীমার ওপরে অবস্থান করছিল। করোনার প্রকোপে এসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অন্যদিকে করোনার আগেই দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস