লক্ষ্মীপুরের জেলে পাড়ায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক হতাশা। ভরা মৌসুমেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় জেলেদের জালে দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশ। এতে চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখে পড়েছে জেলার প্রায় ৬৫ হাজার জেলে পরিবার। নদীতে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ না পাওয়ায় জেলার ছোট-বড় ৩০টি মাছঘাট, ২৬টি বরফকল এবং ১৫১টি মাছ বাজারে বেচাকেনা কমেছে। প্রতিদিন কোটি টাকার কেনাবেচা হওয়ার কথা থাকলেও ইলিশ সংকটের কারণে ঘাটগুলো প্রায় প্রাণচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ইলিশ ধরা না পড়ায় এনজিওর ঋণের টাকা আর মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধের ভাবনায় জেলে পরিবারগুলোয় নেমে এসেছে ব্যাপক হতাশা। বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় জেলে এবং আড়তদাররা পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর হতে জানা গেছে, প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ রাখার কারণ হচ্ছে, ছোট ইলিশ যাতে বড় হতে পারে। আর এ নিষিদ্ধ সময়ে নিবন্ধিত জেলেদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হয়। জেলায় মোট মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৫০ হাজার ২৫২ জন ও মৎস্যচাষির সংখ্যা ৫৪ হাজার ১২৫ জন।
জেলেরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর এমন সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। চলতি বছর ভরা মৌসুমে দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
লক্ষ্মীপুরের সবচেয়ে বড় মাছঘাট হচ্ছে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট মাছঘাট। এখানে ৪১টি বক্সে প্রতি বছর আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি বছর নদী ভাঙন এবং মহামারি করোনার প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে জেলেদের জালে মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এ ঘাটে ব্যবসা অর্ধেকে নেমেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি এবং খুচরা ক্রেতারা এসে ভিড় করলেও মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন।
অপরদিকে আড়তদাররা ইলিশের ওপর নির্ভর করে জেলেদের মাঝে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। মেঘনার ইলিশ মাছ বিক্রি করে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের মুনাফা অর্জন করবেন এ আশায়। এখন মুনাফা দূরে থাক মূলধন নিয়েই বেশ চিন্তিত আড়তদাররা।
মজুচেীধুরীহাট মাছ ঘাটের বরফ ব্যবসায়ীরা জানান, জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় এখন কেউ বরফ কিনতে আসছেন না তারা। বরফ উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন সবসময় চালু রাখতে হয়। ফলে বরফ বিক্রি না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
এই ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, নদীতে নাব্য সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবেই লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় জেলেদের জালে দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশ। তবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য সংকট দূর করা হলে এ সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন তিনি।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে