ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে সংশয়

ঈদ আসলেই কর্মীদের বেতন-বোনাস পরিশোধে অনীহা এটা প্রতি বছরেরই নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। আসন্ন কোরবানির ঈদের আগেও এর পুনরাবৃত্তির ঘটার শঙ্কা রয়েছে। শিল্প পুলিশের ধারণা, এবার ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে প্রায় ৭৯০টি কারখানা।

দেশের শিল্প বিস্তৃত এলাকাগুলো আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা—এ ছয় এলাকায় সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৬০২টি। শিল্পের উন্নয়নের কারণেই এসব শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। তার মধ্যে শুধু পোশাক কারখানাই রয়েছে ২ হাজার ৮৯৩টি। এছাড়া খাতেরই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র শিল্পের কারখানা আছে ৩৮৯টি। পাশাপাশি বেপজার আওতায়ও রয়েছে বেশকিছু বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা। এ খাত গুলোর বাইরেও ছয় শিল্প এলাকায় চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধ সব খাত মিলিয়ে অন্যান্য কারখানা রয়েছে ৩ হাজার ৮৬৬টি।

ছয়টি শিল্প এলাকার মধ্যে যেসব কারখানা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ, সে তালিকায় ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের কারখানাই আছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট ৭ হাজার ৬০২টি কারখানার ভেতর বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানার সংখ্যা ৭৯০। তার মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৩৮২টি। এদিকে, একই খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ৯২টি। বস্ত্র খাতের শিল্প মালিক সংগঠন বিটিএমএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৪০টি। বেপজার আওতাভুক্ত কারখানা রয়েছে ৩২টি। বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানার তালিকাইয় থাকা বাকি ২৪৪টি অন্যান্য খাতের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুস সালাম জানান, বিজিএমইএসহ খাতভিত্তিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি যেন শ্রমিকরা হাসিমুখে ঈদ করতে পারেন।

শিল্প পুলিশের দেয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, বেতন-বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানা সবচেয়ে বেশি গাজীপুর এলাকায়। তাছাড়া এ এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৭২টি। তার মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে, এমন কারখানার সংখ্যা রয়েছে ৪৬৬।

সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানার দিক থেকে গাজীপুরের পরেই রয়েছে চট্টগ্রামে। এ এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ১ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে বেতন বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে, এমন কারখানার সংখ্যা ১৩৩।

সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানার দিক থেকে এর পরেই নারায়ণগঞ্জে শিল্প পুলিশের আওতাধীন এলাকায় কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৪৫৯টি। তার মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে ১০০টির বেশী। এদিকে, আশুলিয়া এলাকায় মোট ১ হাজার ৩৫৬টি কারখানার মধ্যে ৫৭টি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে।

তাছাড়া ময়মনসিংহ এলাকায় মোট শিল্প কারখানা রয়েছে ১৩১টি। সেখানে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে প্রায় ২০টি কারখানা। অন্যদিকে, খুলনায় ৩৫৫টি কারখানার মধ্যে ১৪টি বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিল্প পুলিশ।

এছাড়া, ঈদের আগে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যর্থ কারখানাগুলোকে নিয়ে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএর পাবলিক রিলেশন কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম জানান, ক্রয়াদেশ স্বল্পতা ও অর্থায়ন সংকটে থাকায় বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে অনেক বেগ পেতে হবে এমন ১৭৭টি কারখানাকে আমরা শনাক্ত করেছি। কারখানাগুলোকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে এই বছর সামগ্রিক শিল্প পরিবেশ অনেকটাই ভিন্ন। গত ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ ছিল অনেক শিল্প-কারখানা। বন্ধের মধ্যে সংক্রমণ পরিস্থিতির শুরু থেকেই ছাঁটাই, বকেয়া পরিশোধ নিয়ে শিল্প এলাকাগুলোয় কিছু মাত্রায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায়। তবে বর্তমানে শ্রম অসঙ্গতি না থাকলেও ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অসন্তোষের আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন শিল্প গোয়েন্দারা। তারা জানিয়েছেন, বেতন-বোনাস নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি গত ঈদের মতো এবারের ঈদেও শ্রমিকদের নিজ কর্মক্ষেত্র এলাকা ত্যাগ না করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ নিয়েও শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন