নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে লাখো ভক্তকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান হিমু কিংবা মিসির আলির এই স্রষ্টা।
অন্যান্য বছরের মতো না হলেও, এ বছর সীমিত আকারে পরিবার ও ভক্তরা দিনটিতে স্মরণ করবে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে, সারা দেশজুড়ে। জানা গেছে, করোনার কারণে এবার সীমিত আকারে দোয়ার আয়োজন থাকছে হুমায়ূন আহমেদের জন্মস্থান নেত্রকোনা এবং লেখকের সবচেয়ে প্রিয় স্থান গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে। তাছাড়া টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকছে তার নাটক, চলচ্চিত্র, গান ও সাহিত্য নিয়ে দিনভর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখায় কীর্তি রেখে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। সেটায় এনে দেয় তার পরিচিতি। এরপর থেকে লিখেছেন তিন শতাধিক গ্রন্থ। যার প্রায় সবই সাড়া ফেলেছে দেশ-বিদেশের পাঠকমহলে।
লেখার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একদিকে সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন পাঠককে, অন্যদিকে নির্মাণ করেছেন অনন্য সব নাটক, চলচ্চিত্র ও গান। তার হাত ধরেই তারকার সম্মান পেয়েছেন এ দেশের অনেক শিল্পী। তার অনন্য সৃষ্টিতে উঠে এসেছে নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, বৃষ্টিসহ বাংলার চিরচেনা প্রকৃতির ব্যঞ্জনা।
এছাড়া, টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক রচনা ও পরিচালনার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০-এর শেষের দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। তার নির্মিত ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে ২০০৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’। এটি ২০০৬ সালে অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল। তাছাড়াও এটি প্রদর্শিত হয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ২০০৮-এ ‘আমার আছে জল’ পরিচালনা করেন তিনি। মূলত তার সব চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ গান রচনা করেছেন তিনি নিজেই।
২০১২ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত শেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
অনন্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
দেশবরেণ্য এই শিল্পী ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কুতুবপুরে জন্মেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। হুমায়ূনের মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। দুই ভাই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব।
উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদের সূত্র ধরে এরইমধ্যে নির্মাণে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তার যোগ্য উত্তরসূরি নুহাশ হুমায়ূন।
আনন্দবাজার/শাহী