ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় ব্যবসা গোটানোর পথে বিদেশী চেইন রেস্তোরাঁগুলো

মাত্র মাস তিনেক আগেও রাজধানী ধানমন্ডির কেএফসির (কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন) আউটলেটে লেগে থাকত খাদ্যপ্রেমিকদের ভিড়। জমজমাট আসর। সে সময় ওই আউটলেটে দৈনিক প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন বিক্রি নেমে এসেছে ৩০ হাজার টাকায়। একই অবস্থা বিদ্যমান কেএফসির সবগুলো শাখারই। ব্যবসা না থাকার কারণে রাজধানী ঢাকার ৩৭টি আউটলেটের মধ্যে সাতটিই বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে চেইন রেস্তোরাঁটি।

শুধুমাত্র কেএফসি নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ চেইন রেস্তোরাঁই দুঃসময় পার করছে এখন। করোনার কারণে দীর্ঘ দুই মাস পুরো রাজধানীর সমস্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসা ছিল নিম্নমুখী। অন্যদিকে লকডাউন শিথিলের পরও আগের জৌলুশ ফেরেনি পিত্জা হাট, বিএফসি, নান্দুস, জিনজিয়ান, বার্গার কিংসহ নামিদামি বিদেশী চেইন রেস্তোরাঁগুলোর। প্রতিষ্ঠান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ নানামুখী ব্যয় নির্বাহ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

রেস্তোরাঁগুলোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এরই মাঝে ক্রেতাস্বল্পতায় কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের আউটলেট বন্ধ রেখেছে। ঈদের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে লোকসানি আউটলেটগুলো বন্ধ করে দেবে এমন সিদ্ধান্তও নিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

ঢাকার আরেকটি বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হচ্ছে জিনজিয়ান। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ১১টি আউটলেট থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাবে তিন মাস ধরে সব আউটলেট বন্ধ রয়েছে। দেশে বিদেশী পর্যটক না আসা, করোনা ভীতিসহ নানা কারণে কাস্টমার যান না সেখানে।

জিনজিয়ান রেস্তোরাঁর অ্যাডমিন অফিসার মিজানুর রহমান জানান, করোনা মহামারিতে আমাদের ১১টি আউটলেটের সবকটিই বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বাসা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল তো রয়েছেই। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

এদিকে, করোনার প্রভাবে রাজধানীর গুলশান-২-এ অবস্থিত নান্দুস রেস্তোরাঁয়ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে রেস্তোরাঁর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সকল কর্মচারীর জন্য বাধ্যতামূলক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড শিল্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটু বেশী খরচ হলেও ক্রেতার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি আমরা। শুধু তাই নয়, কাস্টমারদের নিরাপত্তার স্বার্থে রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে চলছে বেচাকেনা, যে কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ কাস্টমার কমেছে।

জানা যায়, তিন মাস আগে প্রতিটি আউটলেটে ২৪ ঘণ্টায় ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। একই অবস্থা এখন বার্গার কিং রেস্তোরাঁতে। রাজধানীতে এ প্রতিষ্ঠানের ১২টি আউটলেট থাকলেও কাস্টমার সংকটে সাতটি বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সাথে বিক্রি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। আগে প্রতিটি আউটলেটে একদিনে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হলেও এখন সেখানে বেচাবিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার টাকার।

বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এমন বিদেশী রেস্তোরাঁগুলোর আলাদা কোনো পরিসংখ্যান এখন নেই। তবে বাংলাদেশে এমন ছোট বা বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার হোটেল ও রেস্তোরাঁ হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হতো। মালিক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী এ কাজে জড়িত। তবে করোনার মহামারিতে গত দুই মাস এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল।

এছাড়া, গত মাস থেকে সীমিত পরিসরে চালু হলেও সারাদেশে এখনো ৮৫ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। এরই মাঝে এ খাতে ২০ শতাংশ কর্মচারী কাজ হারিয়েছে। দক্ষতা থাকলেও হঠাৎ বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। পরিস্থিতি এমন থাকলে আরো ৬০ শতাংশ কর্মী বেকার হবেন বলে তারা ধারণা করছেন।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব এম রেজাউল করিম সরকার জানান, করোনার কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রেস্তোরাঁ ব্যবস্থায়। লকডাউন ও সাধারণ ছুটির কারণে এ খাতে প্রায় ৬০ হাজার কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তবে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য বিল ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে মালিকদের। এ পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রণোদনা দিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন