করোনার মহামারির কারণে নতুন উৎস ভূমি চীন থেকে মুখ ফেরানো ব্যবসায়ীদের টানতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
এখন থেকে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী তার লাভের অর্থ বিদেশি মুদ্রা (এফসি) অ্যাকাউন্ট খুলে সেই অ্যাকাউন্টে রাখতে পারবে। তাছাড়া যখন খুশি তখন ওই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ নিজ দেশে বা অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারবে। চাইলে ওই অর্থ বাংলাদেশে নিজের প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পুনঃবিনিয়োগও করতে পারবে।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেশে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গত বছরের শেষে ঘটার পর থেকে দেশটি থেকে বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী গুটিয়ে পড়তে চাইছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে জটিলতাও এতে প্রভাব ফেলছে।
চীনের এক সরকারি তথ্য জানিয়েছে, মহামারি শুরুর পর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১০ শতাংশ। যেখানে শুধু মার্চেই গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ খুরশিদ ওয়াহাব জানান, করোনাভাইরাস মহামারি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমস্যার প্রেক্ষাপটে চীন থেকে সরে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ২৬ জুন এক চিঠিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন সে ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছিল।
সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এফসি অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে খুরশিদ জানান, “এতদিন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভের অংশের অর্থ বিদ্যমান বিধি-বিধানের আওতায় নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারতেন। এখন এফসি অ্যাকউন্ট খুলে ওই অ্যাকাউন্টে লভ্যাংশের অর্থ রাখতে পারবেন। তাছাড়া যখন খুশি, তখন নিজ দেশে বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে যেতে পারবেন।
এছাড়াও “আবার যদি ওই বিনিয়োগকারী মনে করেন তিনি তার লভ্যাংশের অর্থ বাংলাদেশে নিজের প্রতিষ্ঠানে পুনঃবিনিয়োগ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন, তাহলেও ওই এফসি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে বিনিয়োগ করতে পারবেন।”
এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে বলে ধারণা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
গত ২৬ জুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, “বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজীকরণ বা যুগোপযোগী করতে হবে।”
“চীন থেকে এখন অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের অনেক দেশ, যেমন ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, কর-ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং পদ্ধতি সহজতর করছে।
তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা দরকার, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুততম সময়ে আইনটি পাস করার উপর জোর দেওয়া হয় চিঠিতে।
পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ‘যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে’, তা কাজে লাগাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে বিদ্যমান আইনগত, নীতিগত এবং পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি এমনিতেই খারাপ ছিল অবকাঠামোগত ও আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতার জন্য। এখন করোনাভাইরাস মহামারিতে সেখানে ধস নেমেছে।
গেল বছর বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ তার আগের বছরের অর্ধেকে নেমে আসার পর এবার তাতে আরও অধঃগতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন খাতে সবমিলিয়ে ৩৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে, যা পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম।
আনন্দবাজার/শাহী