বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। এই সংকটময় মুহূর্তে দেশের গার্মেন্টস মালিকরা সরকারের কাছে চেয়েছিল প্রণোদনা, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে ঋণ। সরকারের দেওয়া এই ঋণের টাকা গার্মেন্টস মালিকদের শোধ দিতে হবে আবার ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না গার্মেন্টস মালিকরা। তাই সরকারের কাছ থেকে পুনরায় প্রণোদনা নেওয়ার কৌশল হিসেবে সাধারণ ছুটির মাঝেও গার্মেন্টস কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গার্মেন্টস মালিকরা। বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে রবিবার (৫ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে রাস্তাগুলোতে শ্রমিকদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। হঠাৎ করেই দেশের প্রধান সড়ক, ফেরীতে জনমানুষের উপচে পড়া ঢল দেখা গিয়েছে। পোশাককর্মীরা পিকআপ, ট্রাক, ভ্যানগাড়িতে করে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার ফলে অনেকে মহাসড়কে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাত্রা করেছেন।
তবে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমএইর সভাপতি রুবানা হক জানান, রাস্তার সব শ্রমিক গার্মেন্টস শ্রমিক নয়। গার্মেন্টস মালিকদের এজন্য দায়ী করা ঠিক হবে না। কেননা ২৫ মার্চ গণপরিবহন বন্ধ হয়েছে। আমরা ২৬ মার্চের পর গার্মেন্টস বন্ধ করেছি। তিনি উল্লেখ করে জানান, করোনার প্রভাবে কোনো শ্রমিক যদি উপস্থিত নাও থাকেন, তাহলে মানবিক বিবেচনায় তার চাকরিটি যেন থাকে। এজন্য বিজিএমইএর সব সদস্যের কাছে আমি এই অনুরোধ করবো।
রুবানা হক জানান, কলকারখানা এবং পরিদর্শন অধিদফতর আমাদের যে সার্কুলার দিয়েছিলেন তাতে লেখা আছে, যেসব রফতানি মুখী প্রতিষ্ঠানে অর্ডার আছে এবং উৎপাদন চলমান আছে, সেসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা একেবারে সুনিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে শিল্প কলকারখানা চালু রাখতে পারে।
এই প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
একজন গার্মেন্টস মালিক জানান, রবিবার যারা কারখানায় আসবে না, তারা বেতন পাবে না এমন ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ার কারণে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা শত ঝুঁকি নিয়েও ঢাকায় আসছেন। এর ফলে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে তার ধারণা।
তিনি উল্লেখ করে জানান, ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গার্মেন্টস খাতের জন্য অফেরতযোগ্য একটি প্রণোদনার ঘোষণা আশা করছেন এই খাতের নেতারা। যে প্রণোদনায় কোনরকম সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রাণঘাতী করোনার প্রতিঘাত মোকাবিলার জন্য দেশের রফতানিমুখী খাতের শ্রমিকদের বেতন দিতে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আনন্দবাজার/শাহী