বৃহস্পতিবার, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঋণের ১২.৫৬ শতাংশ খেলাপি

খেলাপি ঋণ দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

খেলাপি ঋণ দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

দেশের আর্থিক খাতের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলা‌পি ঋণ। এই ফোঁড়া নিরাম‌য়ে কার্যকর কো‌নো পদ‌ক্ষেপ নেয়নি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব‌্যাংক। উল্টো নানা সু‌বিধা দি‌য়ে গে‌ছে। ফ‌লে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়‌ছে খেলা‌পি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ স্থিতি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ খেলাপি। তিন মাস আগে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা যা ছিল মোট বিতরণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসে বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।

এছাড়া, যেসব ঋণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, সেসব গ্রাহকদের বড় অংশের বিরুদ্ধে আছে অর্থপাচারের অভিযোগ। প্রভাবশালীদের সেসব অবৈধ সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাশাপাশি সংস্থাটি পাচারকারীদের স্থানীয় সম্পদ জব্দের জোর চেষ্টা করছে। দেশের অর্থ আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ ও পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করছে সরকার। বিএফআইইউয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক খাতের বিতর্কিত এস আলম, সামিট, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, ওরিয়ন, নাসাসহ অনেক গ্রুপের তথ্য চেয়ে একাধিক দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে। প্রভাবশালীদের হাতে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কী পরিমাণ অর্থ বের করে পাচার হয়েছে সেটি যাচাইয়েরও কাজ চলছে। সংস্থাটির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আলোচিত গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকদের অর্থপাচারের আংশিক তথ্য বিএফআইইউয়ের কাছে রয়েছে। এখন আরও বিস্তারিত তথ্য নেওয়ার কাজ চলছে। বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে। পাচার অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হলেও দেশের সব সংস্থা মিলে জোর চেষ্টা করছে। আশা করছি সুফল বয়ে আনবে।

আরও পড়ুনঃ  আত্রাইয়ে দুই দফতর থেকে ১৩ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণমাধ্যমে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে ঋণের নামে কত টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেছেন, তার হিসাব করা হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছে। পৃথিবীতে কেউ এভাবে ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না, আমার জানা নেই। তার নামে-বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। এ মুহূর্তে কেউ যেন এস আলম গ্রুপের সম্পদ না কেনেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন