ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিস্যার চেয়ে পদ্মায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি কম ১৫৩২১ কিউসেক

হিস্যার চেয়ে পদ্মায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি কম ১৫৩২১ কিউসেক

বাংলাদেশ ও ভারত গঙ্গার (পদ্মা নদীর) পানি বণ্টন চুক্তি ১৯৯৬ অনুযায়ী পদ্মা ও গঙ্গায় পানি পরিমাপ শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এবারও হিস্যার চেয়ে ১৫ হাজার ৩২১ কিউসেক পানি কম পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পানির পরিমাপ ছিল ৯০৭৩০ কিউসেক। আর ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে পানির পরিমাপ হয়েছে মাত্র ৭৫৪০৭ কিউসেক।

সোমবার বিকেলে পাবনার আঞ্চলিক হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য সুত্র মতে, বাংলাদেশের পদ্মানদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টসহ উজানে ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা-পদ্মা চুক্তি অনুসারে পানির পরিমাপ করতে ভারতের কেন্দ্রীয় জল কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দুদেজা এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় জল কমিশনের সহকারী পরিচালক মুকেশ কুমার শর্মা ও নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দোজেজা দুই সদস্যের ভারতীয় দল বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁরা গতকাল সকাল থেকে পাবনা ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের ৪৫০০ ফুট উজানে পদ্মা নদীর পানির স্তর পরিমাপ করেছে।

অপর দিকে যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রিয়াদুর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যের বাংলাদেশ দল ভারতের ফারাকা পয়েন্টে গঙ্গার পানির প্রবাহ পরিমাপের জন্য পৌছেছেন। তারাও ফারাক্কা সংলগ্ন এলাকায় পানির পরিমাপ কাজ শুরু করেছেন।

জেআরসি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রমত্তা পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বছরের শেষে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পানি ছিল ১২৫৬৬২ কিউসেক, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পানি ছিল ৯৩৬৪৮ কিউসেক। এবছর কম এসেছিল ৩২০১৪ কিউসেক পানি। ২০২৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর পানি ছিল ৮০৫৩৬ কিউসেক। ২০২২ সালের থেকে ২০২৩ সালেও পানি কম এসেছে ১৩১১২ কিউসেক।

আবার বছরের শুরুর দিকে ২০২১ সালের ২ জানুয়ারিতে পানি পরিমাপ হয়েছিল ৭৮২৪৪ কিউসেক, ২০২২ সালে ১ জানুয়ারিতে পানি পরিমাপ হয়েছিল ১১৮০২০ কিউসেক। এবছর অতি বৃষ্টিজনিত প্রভাবে ৩৮৭৫৬ কিউসেক পানি ছিল। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পানির পরিমাপ ছিল ৯০৭৩০ কিউসেক। আর ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে পানির পরিমাপ হয়েছে মাত্র ৭৫৪০৭ কিউসেক। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পানি কম এসেছে ১৫৩২১ কিউসেক। এই হিসেবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ডিসেম্বর পর্যন্ত পানি প্রবাহ গঙ্গার পানি চুক্তি অনুসারে তুলনামুলকভাবে কম।

সরেজমিন পাকশী পদ্মানদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গিয়ে ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২ টি গার্ডারের পিলারগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রিজের মাঝে উল্টর-দক্ষিণভাবে বালুর চর পড়েছে। এতে নদীর কয়েক জায়গা খালে পরিণত হয়েছে। আবার টুকরো টুকরো বালু চর পড়ায় নদীর অসংখ্য জায়গায় দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। নৌকা নিয়ে ছেলে মেয়েরা সেখানে গিয়ে নাচানাচি ও গান বাজনা করে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের নৌকাঘাটের মাঝি তুহিল মালিথা (৫৬) জানান, বিগত ২৫ বছর ধরে পদ্মানদীতে নৌকা চালাচ্ছেন। কিন্তু এবারের মত বিগত ৭-৮ বছরের মধ্যে পদ্মা নদীতে এত পানি কমতে দেখিনি। আগামী মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র মাস পর্যন্ত নদীতে আরও পানি কমবে। ইতোমধ্যেই পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বালুর বিশাল বিশাল চর পড়ে গেছে।

নৌকা মাঝি লালু মিয়া (৫০), আব্দুল মালিক (৩৫) ও শাহিন হোসেন জানান, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পানি পরিমাপ করা হয়। এই সময় ভারত থেকে আসা লোকজনের সঙ্গে বাংলাদেশের লোকজনকে পানি পরিমাপ করতে দেখি।

প্রতিবারই তারা জানায় গঙ্গা চুক্তি অনুসারে পদ্মা নদীতে পানি আসে। তাহলে এই সময় নদীতে বিশাল বিশাল বালু চর পড়ে প্রমত্তা পদ্মা নদী খালে পরিণত হয় কিভাবে। বর্তমানে নদীতে যে পরিমান পানি রয়েছে তা পরিমাপ চলাকালিন সময়ের কয়েকদিন পানির প্রবাহ আরও কমে যাবে।
পাবনার আঞ্চলিক হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিম জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর পদ্মানদীতে হিস্যা অনুসারে ১৫৩২১ কিউসেক পানি কম এসেছে।

“ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গা ও পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানির স্তর পরিমাপ করেন। উভয় দেশের পানির প্রবাহের যৌথ পর্যবেক্ষণ চলবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত । চুক্তি অনুসারে ১০ দিন পর পর পানি প্রবাহের পরিমাপ রেকর্ড করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম চক্রে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির স্তর ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ পানি পাবে। দ্বিতীয় চক্রে বাংলাদেশ পাবে ন্যুনতম ৩৫ হাজার কিউসেক এবং বাকি অংশ পাবে ভারত। ফারাক্কা পয়েন্টে পানি প্রবাহ ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক থাকলে শেষ চক্রে ভারত পাবে ন্যূনতম ৪০ হাজার কিউসেক এবং বাকি পানি পাবে বাংলাদেশ।

তিনি আরও জানান, চুক্তি অনুযায়ী ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই নিশ্চিতভাবে ন্যূনতম ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। গঙ্গার উজানে পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ না থাকায় এ বছর পদ্মায় পানির প্রবাহ কমেছে। তাছাড়া উজানে কম বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মায় পানির প্রবাহ কম। এই কারণে নদীর উজান এলাকায় গাছপালার উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। আগামী কিছুদিনে পদ্মা নদীর প্রবাহ আর কিছু কমবে বলেও আশংকা করেন এই কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন