ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল, উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্যবিদরা

ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল, উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্যবিদরা

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে দেশে চলতি বছরে রেকর্ড এক হাজার ৬ জনের মৃত্যু হলো।

রোববার (১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২৮৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৯ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২৫৩ জন।

ডেঙ্গুতে দেশে ২২ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ বছরেই ডেঙ্গুতে কমবেশি মৃত্যু দেখেছে দেশ। এবার মৃত্যুর রেকর্ড সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেল। দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের বড় প্রাদুর্ভাব হয় ২০০০ সালে। সে বছর ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর-২৮১ জন।

গত ২২ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ বছরেই ডেঙ্গুতে কমবেশি মৃত্যু দেখেছে দেশ। এবার মৃত্যুর রেকর্ড সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেল। আর ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা যেখানে ৮৫৩ জন, সেখানে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা এক হাজার ৬ জনে পৌঁছেছে। এত মৃত্যুর পরেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে ‘গতানুগতিক’ পদ্ধতিতে কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ ও আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থায় গড়ে তোলেনি এই দুই মন্ত্রণালয়। পুরো বিষয়টি তারা ‘পরিস্থিতির’ ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এতে কোনোকিছুই আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেনি।

দুই মন্ত্রণালয়ের এমন ‘উদাসীন’ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। এ বছর যে ডেঙ্গু বাড়তে পারে, তা চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা লার্ভা বা শূককীট জরিপেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে পরিচালিত সেই জরিপে লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরে জুন মাসে পরিচালিত জরিপেও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে লার্ভার বেশি উপস্থিতি পাওয়া যায় ঢাকার বাড়িঘরে। এ অবস্থায় মশক নিয়ন্ত্রণে কেবল ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ কিংবা ‘চিরুনি অভিযানের’ নামে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে ‘যৎসামান্য’ তৎপরতা চালানো হয়েছে, তা যথেষ্ঠ ছিল না বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। আমরা ডেঙ্গু কন্ট্রোল করতে পারছি না। সফল হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে হয়তো গণনার মধ্যেও আসছেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মশা নিয়ন্ত্রণের অনেক পদ্ধতি আছে। এর কোনোকিছুই আমরা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারিনি। এখনো পারছি না। তারা (মেয়ররা) কাজ করতে পারেন না। আতিক (ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম) সাহেব হয়তো কোথাও কিছু একটা দেখলেন আর এখানে তা প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমাদের এখানে, আমাদের পরিবেশে সেটা কতখানি কার্যকর হবে তার কোনো ধারণাই হয়তো তাদের নেই। তিনি আরও বলেন, এগুলো তো মুখে বললে হবে না। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে হবে। রাজনীতি খালি মুখের কথায় হয় না।

তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কিংবা যতসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, আমরা ডেঙ্গু কন্ট্রোল করতে পারছি না। সফল হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে হয়তো গণনার মধ্যেও আসছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজীর আহমেদ জোর দেন ঢাকার মশক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ‘অবৈজ্ঞানিক পন্থা’ অবলম্বন ও কারিগরি জ্ঞানের ঘাটতির ওপর। তিনি বলেন, যেকোনো রোগ প্রতিরোধ কিংবা তা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটা কারিগরি দিক থাকে। যেমন- কালাজ্বর বাংলাদেশে নির্মূল লক্যমাত্রা অর্জন করেছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফাইলেরিয়ার ক্ষেত্রেও তাই। এ তিনটাই কিন্তু বাহকবাহিত রোগ। ওই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে কারিগরি দিকগুলো আছে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কিংবা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সেই কারিগরি দিকটার অনুপস্থিতি আছে।

উল্লেখ্য, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১০০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ছয় জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন জন, মার্চে মৃত্যু শূন্য, এপ্রিলে দুই জন, মে মাসে দুই জন, জুন মাসে ৩৪ জন, জুলাই মাসে ২০৪ জন, আগস্ট মাসে ৩৪২ জন ও সেপ্টেম্বরে ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন