২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ে এসে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন এ জেলা খাদ্য উদ্ধৃত জেলা। তাই এখানকার কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবহারের জন্য একটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পনগর গড়ে তোলা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেয়ার ৫ বছরেও দৃশ্যমান হয়নি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ শিল্পনগরী। তাই উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ দাড়ালেও হতাশাগ্রস্থ্য জেলাবাসী।
শুধু তাই নয় একই বক্তব্যে ইকোনোমিক জোন, আইটি পার্ক, মহিলা হোস্টেল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে প্রায় ৫০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ হবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ শিল্পনগরী। যেখানে ২৪৯ টি প্লট হবে। এরমধ্যে ২৫ টি প্লট পাবে নারী উদ্যোক্তারা।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঠাকুরগাঁওয়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রুপরেখা বদলে যাবে এমনটাই স্বাভাবিক মনে করেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ৷ তারা মনে করেন রাস্তা ঘাট ব্রীজ কালভার্ট বিদ্যুতায়ন এসব গতনুগতিক উন্নয়নের মাঝে আর্থসামাজিক উন্নয়নের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত শিল্পনগরী গড়ে তোলা। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতেও ভুলেননি জেলাবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে। তাই এ অঞ্চলের বেকার নারী-পুরুষ দীর্ঘ বছর ধরে মুখিয়ে আছে কাঙ্খিত প্রকল্পগুলো কবে চালু হবে? অপেক্ষার প্রহর কিছুটা দীর্ঘ হওয়ায় হতাশাও বেড়েছে বেকারদের মাঝে।
স্থানীয় বেকার যুবক তৌহিদ আহম্মেদ বলেন, বেকারত্বের গ্লানি টানছি আজ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। এর অবসান চাই। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা বেকার সমস্যা সমাধানে এখনো একটিও শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনি। আমরা এ অঞ্চলের মানুষ এতটাই অবহেলিত আমাদের কাজের জন্য পরিবার ছেড়ে ঢাকামুখী হতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কর্মজীবনের মঙ্গলের কথা ভেবে ঘোষণা দিয়েছেন এখানে শিল্পনগরী গড়ে তুলবেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো সারাদেশ উন্নয়নের স্রোতে ভাসলেও ঠাকুরগাঁওবাসীর কপাল থেকে যেন সহজেই যাচ্ছেনা হতাশার বলিরেখা। কারন সদ্য নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ব্যতিত প্রধানমন্ত্রীর এসব প্রকল্প ঘোষণার বিগত ৫ বছরে একটিও প্রকল্প এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের এমন উন্নয়ন কিন্তু এ নির্বাচনের মধ্যেও আমরা উন্নয়ন নিয়ে হতাশাগ্রস্থ। তিনি বলেন, যারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছেন তারা দ্রুত কাজ করতে পারলে আমাদের বেকারত্বের অবসান হবে এবং অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
জেলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সোস্যাইটির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, দুর্ভাগ্য হলেও সত্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার এতদিনেও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ নগরীর জন্য এক খন্ড জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি। প্রকল্প অনুমোদন হয় কিনবতু বাস্তবায়ন হয়না। স্পেশাল ইকোনোমিক জোন, আইটি পার্ক। ব্যবসায়ীদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার বিমানবন্দর কোনটিই পাচ্ছিনা জেলাবাসী। আমরা খুব অবহেলিত এবং আমরা হতাশাগ্রস্থ্য। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ শিল্প নগরী দৃশ্যমান হতে আর কত দেরি? আমরা দ্রুত প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান করার দাবি জানাই।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করন শিল্প নগরী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে কি না জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও বিসিকের উপব্যবস্থাপক নুরেল হক বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি নেয়া আছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে সকল ভূমি মালিকগণের তালিকা তৈরি করেছেন৷ তারা আমাদের জমি ভূমি বুঝে দিলেই আমরা কাজ শুরু করবো। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা এ বিষয়ে তিনি সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
তবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করন নগরীর জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগ।
এই বিভাগেরতথ্য মতে , ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রাথমিক ধাপে মাইকিং করা হয়েছে, নোটিশ করা হয়েছে, যৌথ তদন্তের মাঠ পর্যায়ে বহি সম্পন্ন হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক চুড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে, রেকর্ডীয় শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে, এখন সাত ধারা কার্যক্রম চলমান আছে। আগামি সপ্তাহে সাত ধারা কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এছাড়াও প্রকল্প এলাকায় গাছপালা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য বন বিভাগকে পত্র দেয়া হয়েছে। অবকাঠামো ক্ষতিপূরণের জন্য গণপূর্তকে চিঠি দেয়া হয়ছে। ভূমি অধিগ্রহণ একটু সময় স্বাপেক্ষ ব্যপার তবে পক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ শিল্প নগরী প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতী উদ্যোগ। এই প্রকল্পটির জন্য আমরা সরকারি বিধি মোতাবেক ভূমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে কাজ করছি। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলোর ঘোষণা দিয়েছেন সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আপনারা জানেন, বিশ্বব্যপী করোনা ভাইরাস ও পরে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে গোটা বিশ্বে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর মধ্যেও প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি জেলাবাসীকে হতাশাগ্রস্থ না হয়ে ধৈর্য ধরার কথা বলবো এবং সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলবো। তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে জেলাপ্রশাসকের কার্যালয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। খুব দ্রুত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ শিল্পনগরীর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন হয়েগেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নির্মাণ কাজ চলমান। সব প্রকল্পই বাস্তবায়ন হবে।