ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হার না মানা চায়না

হার না মানা চায়না

সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে জীবন যুদ্ধে হার না মেনে পাড় জামিরতা গ্রামে তাঁতে কাপড় বুনে ৬ সদস্যের সংসার চালাচ্ছে অসহায় নারী চায়না বেগম (৩৫)। রাক্ষুসী যমুনা সব কেড়ে নিয়েছে তার। ভিটে বাড়ী গৃহহীন হয়ে যমুনা নদী থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে হুরাসাগর নদী তীরের পাড় জামিরতা গ্রামে গত ৫ বছর যাবৎ ভাড়া জায়গায় কোনমতে একটি দুচালা টিনের ঘর তুলে স্বামী সন্তানসহ বসবাস। স্বামী জমির উদ্দিন অসুস্থ কর্মহীন। দুই পুত্র, দুই কন্যা আর অসুস্থ্য স্বামী জমির আলীকে নিয়ে চায়না বেগমের জীবন যুদ্ধ। এর মধ্যে বড় কন্যা জলি (১৭) শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। উপার্জন না করলে ঘরে চুলা জ্বলেনা চায়না বেগমের। তাই প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে সূর্য ওঠার আগেই চায়না বেগমের মাকুরের খট খট শব্দে ঘুম ভাঙে আশে পাশের সকলের।

সকালে সংসারের কাজ শুরু হওয়ার আগেই তাঁতে কাপড় তৈরীতে বসে যায় চায়না বেগম। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে ৬ সদস্যের সংসার চালানো বড়ই কষ্টসাধ্য চায়না বেগমের জন্য। এরই মাঝে সংসারের কাজ সামলানো প্রতিবন্ধী মেয়েকে দেখাশোনা সব কিছুর ঝামেলাই কাঁধে চায়না বেগমের উপর। কর্মক্ষম স্বামী জমির আলীও যেন এখন সংসারের বোঝা। তবুও যেন এতটুকু ক্লান্তী নেই চায়নার। তাঁতের কাজ করে স্বামী, সন্তান নিয়ে একটু বেঁচে থাকার চেষ্টা। গত দুই বছর আগে চায়নার পরিবারের অসহায়ত্ব দেখে স্থানীয় এক হৃদয়বান তাঁত মালিক তার পুরাতন একটি তাঁত উপহার দেয়। যাতে করে প্রতিবন্ধী মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি নিজ বাড়ীতে বসেই করতে পারে উপার্জন। স্বামী তাঁত বুনাতে অক্ষম তাই নিজে ধীরে ধীরে শিখে নেন তাঁত বুনানোর কাজ। তারপর নিজ ঘরের বারান্দায় তাঁত বসিয়ে সেখানেই চলেছে চায়নার জীবনযুদ্ধ। চায়না বেগম তাঁতে কাপড় বুনে প্রতি সপ্তাহে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করে। প্রতিবন্ধী মেয়ের মাসিক ভাতা আর ছাগল মুরগী লালন পালন করে পরিবার চালাচ্ছে চায়না বেগম। এ যেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারীর গল্প।

এ ব্যাপারে তাঁত শ্রমিক চায়না বেগম বলেন, ‘অনেক ছোট থাকতেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ওই সময় আমার স্বামী তাঁতে কাপড় বুনতো। স্বামীর বাড়ী যমুনা তীরের ভাটপাড়া গ্রামে। ৫ বছর আগে নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার এতটুকু ঠাঁই না থাকায় এখানে বাৎসরিক ৩ হাজার টাকা জায়গা ভাড়া দিয়ে বসবাস করি। স্বামী অসুস্থ কর্মক্ষম, মেয়ে প্রতিবন্ধী, আয় রোজগারের কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে তাঁতে কাপড় বুনাই, যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। সব কিছুর দাম বেশি তাই টানাটানি যেন পিছু ছাড়েনা। আমার মতো গরীব মানুষকে দেখার কেউ নেই।

জীবনযুদ্ধে টিকে থাকাটা যেন দিন দিন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে চায়না বেগমে। সল্প উপার্জনে সংসার যেন চলছেই না। এমন অবস্থায় বড়ই ক্লান্ত তিনি। জীবনের ক্লান্তির অবসান পেতে খুঁজছেন পথ। কবে তার ভাগ্যের চাকা উল্টো দিকে ঘুরবে এমন প্রত্যাশায় চালিয়ে যাচ্ছে জীবন সংগ্রাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন