টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী ও কহুয়া নদীতে তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া, উত্তর দৌলতপুর ও পরশুরাম উপজেলার অলকা গ্রামে বেড়িবাঁধে ভাঙনে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ১২২ কিলোমিটার বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার (৭ আগস্ট) ভোরে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এ সময় গাছ কেটে ও মাটি দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। তবে বাঁধের আশপাশের উত্তর বরইয়া, বনিক পাড়া, বিজয়পুর, কিসমত বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগতপুর এবং পরশুরাম উপজেলার অলকা গ্রামসহ ১০টি গ্রামে বানের পানি ঢুকে পড়ে। এতে তলিয়ে গেছে রোপা আমান ও আমন ধানের বীজতলা।
স্থানীয় বিজয় কুমার বলেন, ‘বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সীমান্তবর্তী এ দুই উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রশাসন এই সময় আমাদের জন্য সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এসেছে। এতে আমাদের কোনো উপকারই হয় না। আমরা চাই, এই মুহুরী নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত হোক।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ৩-৪ দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী নদীর পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফুলগাজী সদরের উত্তর বরইয়া, উত্তর দৌলতপুর ও পশুরাম উপজেলার অলকা এলাকায় বেড়িবাঁধে ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, টেকসই বাঁধ মেরামতের জন্য ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে নিরীক্ষণ শেষে। নদীতে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসলে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হবে।
ফুলগাজী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কে এইচ এম মনজুরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ১২০ সেক্টর রোপা আমান এখন পানির নিচে রয়েছে। প্রায় ১০ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে রয়েছে। এ ছাড়া মানুষের সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি থাকায় এখনও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়নি। পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘আমি সরেজমিনে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য ২ লাখ টাকা ও সাড়ে তিন টন চাউল বরাদ্দ দিয়েছি। পানিবন্দি মানুষের জন্য শুকনো খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’