গাজীপুরের শ্রীপুরে “সমলয় চাষাবাদে বøক প্রদর্শনী” প্রকল্পে ব্রি ধান-৮৭ জাতের বীজ ও চারা উৎপাদনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যার কম বীজ প্রয়োগ ও চারা উৎপাদনের ট্রে এবং কম জমিতে প্রদর্শনী দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করলে তড়িঘরি করে অন্য এলাকা থেকে চারার ট্রে এনে প্রদর্শনী মাঠে প্রতিস্থাপন করতে দেখা গেছে। অথচ স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ের ব্যবহার নিশ্চিত করতে রাইস প্ল্যান্ট মেশিনের সাহায্যে বীজতলায় ট্রে’র মধ্যে বীজ বপনের নিয়ম রয়েছে।
শুক্রবার (২১ জুলাই) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর (পশ্চিম পাড়া) এলাকার প্রদর্শনী মাঠে তড়িঘরি করে চারার ট্রে দিয়েও নির্ধারিত সংখ্যক ট্রে প্রদর্শনীর শূণ্যস্থান পূরণ করতে পারেনি। এতে ওই প্রকল্পের লক্ষার্জনে কাঙ্খিত সফলতা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের চাষীরা।
বীজ তলার পরিচর্যা, মাটি সংগ্রহ, ট্রে তৈরী, বীজ, সার, ফসল কাটা, সাইনবোর্ড, প্রযুক্তি প্রদর্শনী বোর্ড প্রভৃতি খরচের বিপরীতে ওই প্রকল্পে শ্রীপুর উপজেলায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি ২০১১-২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসুচীর আওতার একটি প্রকল্প। এতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চারা রোপণ করার কথা রয়েছে। ওই প্রকল্পে কোনো প্রকার সনাইনবোর্ড দেখা যায়নি।
প্রদর্শনীর আওতাভুক্ত একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চলতি বছরের ১০ জুলাই সাতখামাইর মোড়লপাড়া এলাকায় দুই হাজার ট্রে’র মধ্যে বীজতলা স্থাপন করা হয়। প্রকল্পে ৫০ একর জমির জন্য সাড়ে চার হাজার ট্রে স্থাপন করার কথা রয়েছে। কিন্তু সেখানে মাত্র দুই হাজার ট্রে’র মধ্যে মেশিনের সাহায্যে বীজ রোপন করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ জুলাই) পিকআপ ভ্যানে আরও ৫’শ চারাসহ ট্রে এনে বীজতলায় বসানো হয়েছে। পিকআপ ভ্যান থেকে চালক বাবুল ও তার সহযোগী চারাসহ ট্রে নামিয়ে জমিতে স্থাপন করতে দেখা গেছে। তারা পাশর্^বর্তী বরমী ইউনিয়নের বরামা এলাকা থেকে ৫’শ ট্রে নিয়ে আসার কথা জানায়।
শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পিকআপ ভ্যানে অন্য এলাকা থেকে চারাসহ ট্রে এনে বীজতলায় প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। আরও আড়াই হাজার কালো রঙের খালি ট্রে এনে প্রদর্শনী মাঠের পাশে এনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। শ্রীপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর এসব কাজ তদারকি করছেন।
একই গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ্দিন, আব্দুস ছালাম, হাদীছ মিয়াসহ অন্যান্যরা জানান, কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা প্রকল্প শুরুর দিকে তাদের জানিয়েছেন, ৫০ একর জমিতে প্রদর্শনী মাঠ করা হবে। ইদানীং জানিয়েছেন, ১৭ একর বা ৫০ বিঘা জমিতে প্রদর্শনী মাঠ করা হবে। জমি তৈরী ছাড়া অন্য সকল প্রকার কার্যক্রম প্রকল্পের অর্থায়নে করা হবে।
কৃষক ইসলাম মিয়া বলেন, যেখানে প্রকল্প সেখানেই বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কথা। তারা অন্য জায়গা থেকে চারা এনে বীজতলায় বসাচ্ছে। এতে চারার গুণগত মান ঠিক থাকবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এর আগে বৃহষ্পতিবার (২০ জুলাই) এ বিষয়ে জানার জন্য শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তাঁর কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তবে ওই কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, দুই হাজার ট্রে সাতখামাইর প্রকল্পে স্থাপন করা হয়েছে। আড়াই হাজার ট্রে অন্যত্র থেকে আনা হবে। ৫০ একর জমিতে এই প্রকল্পের প্রদর্শনী করা হবে। ৫২জন কৃষক এ প্রকল্পের উপকারভোগী হবে। প্রকল্পের সাইনবোর্ড পরে লাগানো হবে।
এসব বিষয়ে একাধিক কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পটির কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। স্বল্প সময় এবং স্বল্প ব্যয়ে বীজতলা তৈরী, বীজ রোপন, চারা উৎপাদন, আধুনিক মেশিনের সাহায্যে চারা রোপন, কর্তন এবং মাড়াই-ঝাড়াই করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, এই প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার ট্রে বসানোর কথা রয়েছে। কৃষি আবহাওয়া ও প্রযুক্তি নির্ভর। সাম্প্রতিক আবহাওয়া ভাল না থাকায় কৃষকের অনুরোধে আড়াই হাজার ট্রে এখনো বসানো হয়নি। সাড়ে চার হাজার ট্রে’র যন্ত্রপাতিও পর্যাপ্ত নয়। কর্তন পর্যন্ত প্রকল্পটি চলামন থাকবে। তবে কোন মাসে কর্তন করা হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
আনন্দবাজার/শহক