খেলাপি ঋন আদায়ে অনেকদিন যাবৎ সরকার কঠোর অবস্থানে । আর এই ঋন আদায় করতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রধানের মাধ্যমে গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে কমতি নেই সরকারের ।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট–সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহকেরা একের পর এক আবেদন করে যাচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছে ছয় ব্যাংকে। তবে নীতিমালা বাস্তবায়নে নতুন সমস্যায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।
নীতিমালা অনুসারে, খেলাপি গ্রাহককে ২ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করতে হবে, আর বাকি অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন পরের ১০ বছরে।
খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা বলে বিশেষ নীতিমালাটি জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১২ শতাংশ।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—এই ছয় ব্যাংক সরকারকে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, নীতিমালা বাস্তবায়নে তারা কিছু অসুবিধার মধ্যে পড়েছে। কারণ, এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য আবেদনই এসেছে অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে। তবে নীতিমালার আওতায় অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে আবেদন করার সুযোগই নেই।
বিশেষ নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ নগদ জমা দিয়ে আবেদন করা যাবে আগামী মাস পর্যন্ত।
এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) জানিয়েছেন, অবলোপনকৃত ঋণ বিশেষ নীতিমালার আওতাবহির্ভূত হওয়ায় তা আদায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালার সুবিধা প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। বিশেষ নীতিমালার আওতায় এককালীন জমা দেওয়ার বিধানই হতে পারে এ বিষয়ক সমাধান।
ব্যাংকগুলো আরও জানান, বিশেষ নীতিমালা হলেও ২ শতাংশ নগদ জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণের বিষয়টি কোন পর্যায়ে নিষ্পত্তি হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই।
ব্যাংকগুলোর এমডিরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক গত নভেম্বরেই বলেছে যে আবেদনগুলো নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করবে। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। বরং প্রতিটি কেস পর্ষদে না নিয়ে অর্থের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। পরে এগুলো পর্ষদে উপস্থাপিত হতে পারে সারসংক্ষেপ আকারে।
ব্যাংকের খাতায় অনেক গ্রাহক খেলাপি আছেন, যাঁরা ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিজেদের খেলাপি নন দাবি করে আদালতে রিট করেছেন। এমডিদের মতে, বিশেষ নীতিমালা বাস্তবায়নে এটাও একটা বড় সমস্যা। ফলে রিটকৃত ঋণকেও নীতিমালার আওতায় আনা দরকার বলে এমডিরা মত দেন।
যেসব ঋণ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে রিট করা খেলাপি ঋণ, রিটের কারণে সেগুলো পরে অশ্রেণিকৃত বা খেলাপি নয় বলে দেখানো হচ্ছে। অথচ এসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখছে ব্যাংকগুলো। এসব রিট মামলা প্রত্যাহার হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, আদালতে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৭৬টি রিট মামলা হয়েছে, যার বিপরীতে আটকা রয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা।
করণীয় নির্ধারণে ছয় ব্যাংক গত মাসের মাঝামাঝি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে বৈঠক করেছে। বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) নতুন একটি বিষয়ও সামনে নিয়ে আসেন। সেটি হলো, প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সুবিধা।
এই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, এমডিরা বলেছেন যে বিশেষ নীতিমালার আওতায় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়মিত হলেও ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে নিয়মিত ঋণের প্রভিশন সুবিধা পাবে না। কারণ, নিয়মিত ঋণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান থাকলেও বিশেষ নীতিমালায় ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো এমনিতেই প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতেও রয়েছে।
আনন্দবাজার/এফআইবি